Tagged: বাংলায় ব্লগিং
৩৯টি ব্লগ অভিজ্ঞতা।
.
:::এক থেকে তেরো
১) উত্তম ভাবনায় উত্তম লেখা – নেতিবাচক ভাবনায় ধ্বংসাত্মক ব্লগিং
২) ভাষাগত শুদ্ধতা ব্লগারের স্ট্যান্ডার্ডকে উন্নত করে: তাই, যথাসম্ভব ভাষাগত ভুল এড়িয়ে চলা
৩) প্রচুর অন্যের ব্লগ পড়া এবং আন্তরিকভাবেই পড়া, অবশ্যই পছন্দমতো – নিজের পছন্দের বিপক্ষে যাবার প্রয়োজন নেই
৪) মন্তব্য দেবার সময় লেখকের উত্তম/ইতিবাচক দিকটিতে ফোকাস করা (একান্তই প্রয়োজন হলে, অন্য উপায়ে নেতিবাচক বলা)
৫) কারও উত্তম/ইতিবাচক বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে, ইতিবাচক দিকের উন্নয়ন হয় আর নেতিবাচকতা খাটো হতে থাকে
৬) লেখার তাৎপর্য এবং ‘লেখাকে’ লক্ষ্য করে মন্তব্য দেওয়া (ব্যক্তিকে নয়)
৭) লেখা দিয়েই ব্লগারকে মূল্যায়ন করা, তার নাম ছবি সামাজিক পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়া
৮) লেখা সংক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়েও বেশি প্রয়োজন লেখায় সারবস্তু থাকা, তবে অহেতুক দীর্ঘ করার প্রয়োজন নেই
৯) সহজ এবং সোজা ভাষায় লিখিত ব্লগ পঠিত হয় সর্বাগ্রে
১০) সাময়িক পোস্ট না হলে প্রচুর প্রুফরিডিং বা সংশোধন করা, পোস্ট করার আগে
১১) উদারতা ক্ষমাশীলতা এবং রসিকতা – উত্তম ব্লগারের গুণ (ভালো মানুষেরও!)
১২) এমন বিষয়ে লেখা যা নিজেকেও সাহায্য করেছে, উপকৃত করেছে, বিদগ্ধ করেছে
১৩) সারবস্তুহীন লেখা মনে আসলে পোস্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা
.
:::চৌদ্দ থেকে ছাব্বিশ
১৪) পাঠককে প্রাজ্ঞ বিচক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণশীল মনে করা, এবং সেটাই যথার্থ!
১৫) যা কিছুই লেখা হোক, তাতে নিজের মতামত ও বিশ্লেষণ থাকা উচিত
১৬) লেখায় নিজের ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করতে দেওয়া (প্রথাগত লেখকের জন্য ১৫ এবং ১৬ প্রযোজ্য না-ও হতে পারে)
১৭) নিজ বিষয়ে প্রচুর অনুসন্ধান ও অধ্যয়ন করা এবং শ্রম বিনিয়োগ করা
১৮) লেখার বক্তব্য যথাসম্ভব সরাসরি পেশ করতে হয়, অনাবশ্যক ভূমিকায় বিরক্তি উৎপাদন করে
১৯) নিজের প্রিয়/অর্জিত বিষয়টি দিয়েই লিখতে শুরু করা
২০) তথ্য বা তত্ত্বের পরিবেশনায় রেফারেন্স করার সময় যে কোন একটি মাধ্যমকে আস্থা না করা
২১) “১ ছবি ১০০০ শব্দের কথা বলে” – লেখায় প্রাসঙ্গিক ছবি যুক্ত করা
২২) পাঠকের সময়ের মূল্য দেওয়া: লেখার ‘আকৃতি ও প্রকৃতি’ নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা করা
২৩) প্রশ্ন এবং মন্তব্যের উত্তর দিতে হয়, এটি ন্যূনতম সৌজন্যতা
২৪) অন্য ব্লগারের উপস্থিতিকে সম্মান করা, অনাবশ্যক বিতর্ক এড়িয়ে চলা
২৫) ব্লগিংএ জুনিয়রদেরকে অনুপ্রাণিত করা, গঠনমূলক মতামত দেওয়া এবং তাদেরকে গেঁথে তোলা
২৬) লেখায় অন্যের অবদান বা অনুপ্রেরণা থাকলে তা যথাযথভাবে স্বীকার করা
.
:::সাতাশ থেকে ঊনচল্লিশ
২৭) নিজের ভালো লেখা এবং অন্যের লেখায় দায়িত্বশীল মন্তব্য দিয়ে ব্লগিং ক্রেডিবিলিটি বা পাঠকের আস্থা ধরে রাখা
২৮) দেশপ্রেম মূল্যবোধ ক্ষমা ভালোবাসা স্নেহ ইত্যাদি মানবিক উৎকর্ষতার বিষয়গুলো, আচরণে না থাকলেও, অন্তত লেখায় তুলে ধরা
২৯) জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক দিবসগুলো এবং বিশেষ ব্যক্তিদের বিশেষ দিনের প্রতি মনোযোগ রাখা
৩০) একটি নির্দিষ্ট শেডিউল রক্ষা করে পোস্ট দিলে উত্তম, যেমন প্রতি বৃহস্পতি ও শনিবার ইত্যাদি
৩১) নিজের চাহিদামত প্রযুক্তিগত বিষয়গুলোতে (যেমন, এসইও বা অপটিমাইজেশন স্কিল) দক্ষতা অর্জন করতে পারলে সোনায় সোহাগা
৩২) আত্মমূল্যায়ন এবং নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝতে পারার জন্য নিজের প্রকাশিত ব্লগে এবং অন্যের মন্তব্যে মাঝে মাঝে দৃষ্টিপাত করা
৩৩) সৌন্দর্য্য সকলেরই কাম্য – লেখায় পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য্যবোধের পরিচয় দিতে হয়
৩৪) সামাজিক অসঙ্গতি অবিচার দুর্নীতি অন্যায় অত্যাচার দ্বারা ক্ষুব্ধ ব্যথিত হলে, তথ্য তত্ত্ব ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ ও দৃষ্টান্তসহ লেখা উচিত
৩৫) লেখায় দেশমাতৃকা ও স্বদেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা অব্যাহত রাখা
৩৬) রাজনীতি না বুঝলে এবং নিজের বক্তব্য যৌক্তিকভাবে তুলে ধরতে না পারলে, রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকা
৩৭) ধৈর্য্য যেমন সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়, ব্লগিং-এ এর প্রয়োজনীয়তা সর্বাধিক
৩৮) সমাজের উন্নয়নের জন্য, পরিবেশ প্রকৃতি উত্তম কোমলতা সৌন্দর্য্য দেশ নারী শিশু অক্ষম অবহেলিত পিছিয়ে-পড়া নিপীড়িত – ইত্যাদি সংস্কারমূলক ইস্যুতে যথাসম্ভব এবং আপ্রাণ পক্ষপাতিত্ব থাকা
৩৯) ব্লগারকে ব্লগিং নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়, অন্য কিছু নিয়ে নয় – অর্থাৎ অন্যের দুর্বলতার অনুসন্ধান বা ক্যাচালে অংশ না নিয়ে, নিজের লেখায় মনোনিবেশ করা।
[কাউকে জ্ঞান দেবার জন্য নয়, নিজের চিন্তাকে যাচাই করার জন্যই লিখে রাখলাম ব্লগে। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, আধুনিক ব্লগারদের শক্তি সামর্থ্যে আর সম্ভাবনা পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি। বিশ্বাস করি, ছাপার অক্ষরের চেয়ে ব্লগারের লেখার শক্তি অন্যরকমভাবে বেশি, কারণ এখন বইয়ের পাতার চেয়ে কম্পিউটারের স্ক্রিনে মানুষ বেশি দৃষ্টি রাখে। তাই, এবিষয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।]
৫৮ টি মন্তব্য




চুল ছিঁড়ে ফেললে পরে সমস্যা হলে সব দোষ মইনুল ভাইয়ের মুছে ফেলুন | ব্লক করুন

অনেক শুভচ্ছা রইল উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন



শুভেচ্ছা রইলো মাঈনুল ভাই।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন

বড় মাপের মোবাইলের দাম যেভাবে নীচে নেমে আসছে তাতে নেটে পড়ার সংখ্যা দুই এক বছরে অনেক অনেক বেড়ে যাবে। আর এখনই বা খুব কম কিসে? তাই ব্লগিং এর বিষয়ে এ লেখাটা সবার কাজে আসবে। সবার আসলে দায়িত্বের একটা বিষয় চলে আসাটা খুব জরুরী ব্লগিং , এই বাস্তবতা ফুটে উঠেছে লেখাটায়। অনেক অনেক ধন্যবাদ।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন


নিয়মিত চাই এমন দিক নির্দেশনামূলক পোস্ট ।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন

আপনার সৃজনশীল পরামর্শ হদয়ঙ্গম করে নিজেকে গর্বিত মনে করছি…..। সুন্দর পোষ্টের জন্য অনেক কৃতজ্ঞ…..

#অভিনন্দন আপনাকে প্রিয় মাঈনউদ্দিন মইনুল ভাই..ব্লগিং নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখবার জন্য..শুভেচ্ছা
#শেখার আছে অনেক কিছু…আপনার পোস্টগুলো আসলে ভ্যারিয়েশন ক্রিয়েট করে…এক্সিলেন্ট
#পৃথিবীর অনেকগুলো শক্তিশালী যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর মধ্যে ব্লগিং তার স্থান ক্রমান্বয়ে উচুতে নিয়ে যাচ্ছে..হাইলাইট করছে চারপাশের পরিবেশকে অত্যন্ত দারুনভাবে..অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে এসেছেন…একজন আইডিয়াল ব্লগারের জন্য পোস্টটি হবে দারুন কিছু
#ব্লগ রত্নকে আবারো শুভেচ্ছা..ভাল থাকুন সবসময়, এ প্রত্যাশা

এই লেখার চাহিদা হলো একাধিকবার পড়ে তারপর কথা বলা


————–উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন

অনেক ধন্যবাদ জানাইউত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন



ভালো থাকবেন মইনুল ভাই।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন








ইহার পরও বলিব আপনি লিখিয়া যাইতে থাকুন। বেশ গুছাইয়া লিখিতে পারেন। আপনার লেখা প্রায় হারাইতে বসিয়াছিলাম। ভাগ্যগুনে পাইয়া গিয়াছি।
শুভকামনা থাকলো।
উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন

এমন সময় শ্রম এবং একাগ্রতা নিয়ে যে পোষ্ট লেখা হয় তা নিশ্চিত ব্লগের নির্বাচিত পোষ্টে জায়গা পেতে পারে। আল্লাহ জানে সঞ্চালক কি করে! যাই হোক আমরা ভাগ্যবান এমন মানসম্পন্ন পোষ্ট পেয়ে।
ভালো থাকুন। শুভকামনা নিরন্তর!উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন

ব্লগারকে ব্লগিং নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়, অন্য কিছু নিয়ে নয়।——–এই লাইনটা নিয়ে আমি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছি। আমি তো এখনও ছাত্র। তবে গদবাঁধা পরীক্ষা পাসের পড়াশুনা পড়াশুনা প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু চাকরির জন্য তো পড়াশুনা করতে হবে। আর চাকরি না করলে আমার চলবে না। সে ক্ষেত্রে কি আমার ব্লগার হওয়া হবে না? কারণ আমার বেশির ভাগ সময় তো ঐ দিকেই চলে যাচ্ছে।
ধন্যবাদ ভাই। শুভেচ্ছা নিবেন।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন


ব্লগার/অনলাইন একটিভিস্ট হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের উপায়
ফ্রান্সিস বেইকনের ভাষায়, “কিছু লেখা চেখে দেখার জন্য, অন্যগুলো গিলে খাওয়ার জন্য আর সামান্য কিছু লেখা আছে যা চিবিয়ে খেয়ে হজম করতে হয়।” হজম করার মতো লেখা যারা দিতে পারেন, তাদের আর চিন্তার কিছু আছে? পশ্চিমা দেশগুলো ব্লগিং করে জীবিকা অর্জন করছে এরকম ব্লগারের সংখ্যা গুণা যায় না। এখানে পুরোপুরি হুমায়ূন বা খুশবন্ত শিং হবার প্রয়োজন নেই। বরং তা হতে চেষ্টা করলেই বিপথে যাবার সম্ভাবনা আছে, কাকের কোকিল হবার চেষ্টার মতো। দরকার শুধু ব্লগার হবার।
ব্লগিং ক্রেডিবিলিটি কী ও কেন
প্রতিদিন লেখা হচ্ছে মিলিয়ন মিলিয়ন ব্লগ, প্রকাশিত হচ্ছে আর আরকাইভ হচ্ছে; কিন্তু কেউ কি খেয়াল করেছেন, কতগুলোর কথা মানুষ মনে রেখেছে? অথবা আবার ফিরে গিয়ে পড়ে এসেছে, বা অন্য জায়গায় এর উল্লেখ করেছে, ব্যবহার করেছে? বাংলা ভাষায়ই হাজার হাজার ব্লগের সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু ব্লগার অন্যদের মনে স্থান করে নিয়েছে, দখল করে নিয়েছে হৃদয়ের একটুখানি জায়গা – এই অশরীরী পৃথিবীর মধ্যেই। পুরোটাই দৃশ্যমান বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল, স্পর্শ করে বা ‘লাইভ’ দেখে যাচাই করার কোন প্রয়োজন নেই।
একজন ব্লগার যখন পাঠকের মনোভাব ও তার দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রভাব সৃষ্টি করে, তখন অবচেতনে তার লেখার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তার লেখা এবং মন্তব্যে ফুটে ওঠে সৃজনশীলতা। অন্য দশজন ব্লগার বা অনলাইন একটিভিস্ট যেসব ভুল করেন, সেগুলো থেকে তিনি স্বভাবগতভাবেই মুক্ত। তখন বলা যায় তিনি ব্লগিং ক্রেডিবিলিটি (blogging credibility) অর্জন করেছেন। পেয়ে গেছেন লেখার জন্য একটি নিশ্চিত নিরাপদ বিষয়। পাঠক যে রকমের লেখার প্রতি বেশি আগ্রহী, সেবিষয়ে যার দক্ষতা আছে, তার তো আর কিছুরই প্রয়োজন নেই। আবার লেখার বিষয়, ধরণ ও গুণগত মান দিয়ে কোন ব্লগার পাঠক সৃষ্টি করে চলেছেন, ঠিক তার মতো করে। উভয়েরই ফলাফল অভিন্ন: ব্লগে নিরাপদ স্থান (niche)।
কীভাবে ব্লগিং ক্রেডিবিলিটি অর্জন করা যায়
কোন ব্লগারের লেখার ‘বিষয় ও ধরণের’ প্রতি সাধারণ পাঠকের আস্থাকে ব্লগিং ক্রেডিবিলিটি বলা যায়। কোন কোন ব্লগার পোস্ট দিলেই সেখানে পাঠক গিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন, অথবা তিনি কিছু নির্দিষ্ট পাঠক সকল ব্লগ পোস্টেই পেয়ে থাকেন। এরকম অবস্থাকে সাধারণভাবে ব্লগিং ক্রেডিবিলিটি বলা যায়। কথা হলো, কীভাবে ব্লগিং ক্রেডিবিলিটি অর্জন করা যায়? এবিষয়ে কোন ওয়ান-স্টপ সমাধান নেই। নানা জনের নানা কৌশল। সবচেয়ে বড় কৌশল হলো ভালো কিছু লেখা, নিশ্চিত হয়ে লেখা এবং সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা কথাটিকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা। অন্যভাবে বলা যায়, পাঠককে উচ্চতর স্থানে রাখা এবং তাকে হেয় জ্ঞান না করা।
.
.
বিষয়টি নিয়ে পাঠকের কৌতূহল নিবৃতির জন্য ব্লগিং ক্রেডিবিলিটি অর্জনের দু’একটি জনপ্রিয় এবং পরীক্ষীত পদ্ধতি উল্লেখ করছি। আমি একে কৌশল বলছি না, কারণ কৌশলের সাথে কেন যেন ধূর্ত শট প্রতারক ইত্যাদি এট্রিবিউট চলে আসে। আস্থা অর্জনকারী ব্লগারদের মধ্যে এগুলোর স্থান খুব একটা নেই।
ক) প্রতিদিন হাবিজাবি পোস্ট না দিয়ে মানসম্মত লেখা দিন:
নিজের সাথে একটি গোপন চুক্তিতে আসুন। তা হলো, আপনি যে বিষয়ে লিখবেন, শপথ নিন যে তাতে ষোলআনা জেনে শুনেই লিখবেন। অথবা যা জানেন মানেন এবং বুঝেন সেগুলো দিয়েই লিখতে শুরু করবেন। প্রতিদিন পোস্ট দেবার বালখিল্য তাগিদে হাবিজাবি পোস্ট দেবেন না। অন্যের ব্লগ পড়া এবং মন্তব্যদানের ক্ষেত্রেও সাশ্রয়ী হোন। দেখে শুনে বুঝে মন্তব্য দিন। অযাচিত পরামর্শ দেবেন না বা কারও মনোভাবকে আঘাত করে মন্তব্য দেবেন না। এরকম আরও কিছু বিষয়, কমন সেন্স দিয়ে ভাবলেই বুঝা যায়। ওই ধরণের বিষয়গুলো নিয়ে নিজেকে সংযত রাখুন।
খ) আসল ‘আপনাকে’ তুলে ধরুন:
লেখায় আসল আপনাকে তুলে ধরুন। ব্যক্তিগত হোন। নিক আপনার যা-ই হোক, মানুষ এখনও বিশ্বাস করে যে, রোবটেরা ব্লগিং শুরু করে নি। ‘ভেতরের মানুষটি’ প্রত্যেকেরই অনেক ভালো, গুডি বয় অথবা গার্ল! সামাজিক ও বাহ্যিক কারণেই ইগো তৈরি হয়। অন্যকে অনুকরণ করার প্রয়োজন নেই। আপনার নামেই ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করুন। আপনার ‘আপনাকে’ তুলে ধরুন। ব্লগিং ছাড়া অন্য কোন এজেন্ডা না থাকলে, প্রোফাইলে যতটুকু সম্ভব আপনাকে জানতে এবং বুঝতে দিন। লেখা ও মন্তব্যে নিজস্ব বিশ্লেষণ তুলে ধরুন।
গ) সাংগঠনিক আস্থা অর্জন করুন এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোতে সরব থাকুন:
একই ধরণের লেখা লেখেন, একই রকমের ভাবেন – এমন ব্লগারদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করুন। মদনের লেখা চন্দনের পছন্দ। এদিকে চন্দনের বন্ধু হওয়ার সুবাদে সুমনও একদিন মদনের লেখায় ক্লিক করতে শুরু করলো। এভাবে একদিন সুমনের বন্ধু রোমনের চোখে পড়লো মদনের লেখা। ভালো ব্লগার হবার জন্য সেলিব্রিটি হবার প্রয়োজন নেই, তবে লেখার মাধ্যমে অন্যের সাথে ভাবের বিনিময় করুন। আন্তরিকতা, যদি থাকে, তবে প্রকাশ করুন নির্দ্বিধায়।
ঘ) কন্ট্রোল ইয়োর আঙ্গুল – আঙ্গুল দিয়ে বিষ ছড়াবেন না!
বাস্তবিক জীবনে সবাই যেখানে মেজাজ দমন নিয়ে চিন্তিত, সেখানে শুধু আঙ্গুল দমন করেই আপনি কিন্তু মহাত্মা ব্লগারে রূপান্তরিত হতে পারেন। চোখের দেখা হয় না বলে অনেকেই চশমখোর হতে পারেন, শুনিয়ে দিতে পারেন দু’টি শক্ত কথা। আপনার মেজাজটাও খিটমিট করবে, লিখে দিতে তার যথাযথ উত্তর। কিন্তু থামুন, যা লেখবেন তা-ই রয়ে যাবে – বয়ে যাবে আপনার বদমেজাজের সাক্ষ্য। যা ভাবছেন, তা যদি নেতিবাচক হয়, তবে যত সঠিকই হোক না কেন সেটিকে ওল্টে প্রকাশ করুন আপনার কম্পিউটারের স্ক্রীনে। শুধু দু’টো আঙ্গুলকে সংযত হয়ে ব্যবহার করলেই দেখুন কী চমৎকার ফল!
ঙ) লিখিত বক্তব্য চড়ে বসে – থিংক বিফোর ইউ ক্লিক!
Verba volant, scripta manent. এটি একটি ল্যাটিন প্রবাদ যার অর্থ হলো অনেকটা এরকম “মৌখিক বক্তব্য ওড়ে যায় – লিখিত বক্তব্য চড়ে বসে।” লিখিত বক্তব্য সাজিয়ে লিখুন, পলিশ করুন। মুখের কথা অনেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, কিন্তু লেখা শুদ্ধ করা যায়, মুছে দেওয়া যায় এবং সম্পাদনা করা যায়। লেখা পোস্ট দেবার সময় শেষ ক্লিকটি করার পূর্বে দেখে নিন, আপনার লেখায় মানবতা সত্য সৃজন সুন্দর আর ভালোবাসা আছে কিনা। শুভ ব্লগিং!
.
.
ব্লগার হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা বা গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করা একটি সময় সাপেক্ষ এবং ধৈর্যের বিষয়। ভালো লেখা এবং ভালো মন্তব্য দিতে পারলে, স্বল্পতম সময়ে েএকটি পরিচিতি প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। সাইবার বিশ্বে নিজের নামে একটি ব্র্যান্ড গড়ে তুলতে পারলে, এটি আপনার জীবিকা অর্জনের মাধ্যম হতে কতোক্ষণ!
_______________________________________________________________________________________
*প্রথম আলো ব্লগে পাঠক প্রতিক্রিয়া।
এবিষয়ে প্রাসঙ্গিক লেখাগুলো
১)) নেটিকেট বা ইন্টারনেটের আচার-ব্যবহার
আধুনিক ব্লগারদের ১০টি প্রিয় ভুল: 10 Errors of Online Writing
১) অন্য ব্লগারকে অনুকরণের চেষ্টা: Aping Others
পত্রিকায় আর টিভিতে সহজেই সংবাদ পাওয়া যায়। ব্লগার হতে গিয়ে সাংবাদিক হতে চাইলে প্রথমত ব্লগসাইট ছেড়ে দিতে হবে। অন্য দশটি ব্লগপোস্টের মতোই যদি আমার লেখা হয়, তবে পাঠক কেন আমার লেখা পড়বে? অন্যগুলো পড়ে নিলেই তো হলো। অন্ধভাবে অন্যকে অনুকরণ করা, আর সৃজনশীলতাকে গলাটিপে মারা একই কথা। প্রচুর পড়ে ও দেখে খুঁজে নিতে হয় নিজের বিষয়টি। অনন্যতা-ই পাঠককে অনুপ্রাণিত করবে আমার লেখাটি পড়ার জন্য। (মনে থাকে না!)
২) কাদাছুঁড়াছুড়ি বা অন্যের সমালোচনায় অংশ নেয়া: Gossiping
এটি খুবই মজার ও আনন্দদায়ক এবং অভিন্ন শত্রু মানুষকে একে অপরের সাথে বন্ধুত্ব বাড়িয়ে দেয়। অজান্তেই লিখিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি, যাকে বলে আজাইরা পেঁচাল, বুঝতেও পারি না। একেই বলে আদি পাপ, যাতে আমরা অবচেতনে আটকে পড়ি। অন্যের বিষয়ে আপনি ইতিবাচক না হওয়া পর্যন্ত অন্যকে আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক হবার প্রত্যাশা করা বোকামি। (জ্ঞানের কথা!) ব্লগের সমাজ প্রেক্ষিতটি ভুলে গেলে হয় না। যেমন রোপণ সেরকম কর্তন, আপনি রোপণ না করলে কাটবেন কী? তাই ভালোবাসা সহানুভূতি শ্রদ্ধা রোপণ করুন, ঠিক সেটাই আপনার কাছে ফিরে আসবে। শতভাগ গ্যারান্টি! বাংলা ব্লগে প্রচুর সৃজনশীল লেখার সাথে আছে প্রচুর দলাদলি। লেখার মান বাড়লে এসব শেষ হবে এক দিন।
৩) রাতারাতি সফলতার প্রত্যাশা: Dreaming for Rapid Exposure
লেখালেখি একটি শ্রমসাধ্য বিষয় – আমি সেটা বলতে চাই না, কারণ যারা লেখতে ভালবাসেন তাদের কাছে এটি কষ্টদায়ক নয় মোটেই। রবার্ট ফ্রস্ট বলেছেন, লেখতে লেখতে আমি লেখা শিখেছি। লেখে-ই নিজেকে আবিষ্কার করা যায় একজন বিদগ্ধ লেখক হিসেবে। পাঠকপ্রিয়তা শুধু ভালো লেখাতেই আসে না, এরজন্য সময়েরও প্রয়োজন। ধারাবাহিকভাবে একটি নির্দিষ্ট সময় লেখার জন্য বরাদ্দ করলে, সফলতা আসবেই! তবে অতি শিঘ্রই সফলতা আশা করলে হতাশ হয়ে অকালেই লেখা বন্ধ করে দেবার যোগার হয়। (ব্লগারের আবার সফলতা কী?)
৪) পাঠকের বিষয়টি উপেক্ষা করে যাওয়া: Ignoring the Attitudes of the Audience
একটি নির্দিষ্ট সময় ব্লগে অতিক্রম করার পর অনেক ব্লগার নিজেকে আত্মকেন্দ্রিকতায় আবদ্ধ করে ফেলেন। তারা কী করেছেন, কতদিন ধরে ব্লগিং করছেন, কী পছন্দ করেন, কী তাদের ভালো লাগলো, কী ডিসগাস্টিং লেগেছে, কী তার অনুভব, তিনি কত মহৎ, কত আদর্শবান – ইত্যাদি বিষয়ে নিজেকে আটকে ফেলেন। একটি ব্লগ পোস্ট সাধারণত পাঠকের পড়ার জন্য। তাই তার প্রয়োজনটাও ভুলে গেলে হবে না।
৫) অগণিত ভুল করে অনাকাঙ্ক্ষিত বিরক্তি উৎপাদন করা: Irritating Mistakes in Language, Spelling and in Presentation
লেখার স্টাইল খুবই উন্নতমানের, বিষয়ও দরকারী, ভাষাও সরল এবং পাঠক-বান্ধব। কিন্তু বানানের ভুল, ব্যাকরণের ভুল, অনাকাঙ্ক্ষিত ছোট ভুল, বিরামচিহ্নের অবিরাম ভুল, তথ্যের ভুল, সূত্রের ভুল, অপ্রাসঙ্গিক ছবি – হরেক রকমের ভুল দিয়ে এই ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে, আপনি পাঠককে খুব থোরাই কেয়ার করেন।
৬) দিনে একশ’বার মতামত স্ট্যাট দেখা: Killing Time Seeing Hit Stats
কতগুলো মন্তব্য পড়লো আমার লেখায়? কে মতামত দেয় নি? কেন দেয় নি? এতো ভালো লেখা পোস্ট দিলাম, পাঠক আমারটি না পড়ে কী করছে এখন? (নিজের কথাই কইতাছি!) বারবার নিজের রূপকে দেখার এই নার্সিসিজম আপনার লেখক সত্ত্বাকে কুঁকড়ে মারবে। শেইক্সপিয়রের লেখা আমরা এখনও পড়ে ভিমরি খেয়ে বলি, আহা কত চমৎকার কথা! তিনি তার ৫শ’ বছর পরের পাঠকের কথা মনে রেখেছিলেন? চিন্তিত হয়েছিলেন তার পাঠকপ্রিয়তার কথা?
৭) কৃতীত্বকে স্বীকার না করা: Ignoring Other People’s Credit/Contribution
যেখানে যার কৃতীত্ব, সেটা লেখকের হোক বা পাঠকের হোক, তা স্বীকার না করা অতি স্বাভাবিক মানসিকতা। সাধারণত অন্যের ভালো দিক সহজে আমাদের চোখে পড়ে না; চোখে পড়লেও মনে থাকে না; মনে থাকলেও মুখে তা স্বীকার করি না; স্বীকার করলেও তা উদারভাবে প্রকাশ করি না। উত্তম যদি হতে চান তবে অন্যের উত্তম দিকটি ভালোমত সনাক্ত করুন, এবং তা স্বীকার করুন (এহেম!)।
একসময় দেখবেন সকলের উত্তম গুণগুলো কীভাবে আপনার মধ্যে চলে এসেছে। তাই প্রশংসা করুন উদার হস্তে এবং পকেট খালি করে। (একখান খাঁটি কথা কইলাম!)
৮) মন্তব্যের উত্তর না দেওয়া: Non-responsive to Readers’ Comments
এবিষয়টি রহস্যময়, কেন জানি না উত্তর দিতে মন চায় না। (অর্থাৎ মুন্চায় না!) অথবা একই কথা দিয়ে সকলকে একটি দায়-সারা ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করে দিই। মাঝে মাঝে সকলের মন্তব্যের নিচে একটি ‘গণ ধন্যবাদ’ দিয়ে দিয়ে বলি, “যারা আমার লেখায় মতামত দিয়েছেন, তাদের সকলকে ধন্যবাদ।” এর অর্থ অনেকটা এরকম: “আরে, আমার লেখা পড়বেন না তো, কার লেখা পড়বেন? আমার লেখা তো পড়বেনই, এটাই স্বাভাবিক।” এখানে বলে রাখি: ব্লগে অনেক ভালো ভালো পোস্ট মাত্র দু’একটি মতামত নিয়েই তলিয়ে যায় লেখকের নিজ আরকাইভে। তাই ভালো লেখা দিলেই যে পাঠকে তা গোগ্রাসে গিলবে, এরকম আশা করা অনেকাংশেই ভুল।
৯) মিথ্যা, অনুমান-নির্ভর এবং প্লেজিয়ারাইজড পোস্ট দেওয়া: Plagiarized Post/Information
পাঠকের পর্যবেক্ষণশীলতার ব্যাপারটি অনেকেই আঁচ করতে পারি না। মনে করি পাঠক বুঝি খুবই বোকা-সোকা, কিছুই বুঝে না। ‘লেখা’ মানে হলো দলিলভুক্ত করা, এটি কত বছর ধরে কত সহস্র পাঠক পড়বেন তা আর লেখকের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। মিথ্য আর ধার-করা লেখা প্রকাশ করলে, আজ নয় কাল তা প্রকাশিত হবে এবং লেখক না জানলেও নবীণ প্রজন্ম ধিক্কার দেবে লেখককে। একটি বিষয় লেখকের নিয়ন্ত্রণেই থাকে চিরদিন। তা হলো, লেখক তার লেখারকনটেন্ট ও কোয়ালিটি দিয়ে কালোত্তীর্ণ মনোভাব তৈরি করতে পারেন পাঠক-হৃদয়ে।
১০) পইন্টলেস রাইটিং বা উদ্দেশ্যহীন লেখা: Pointless Writing – Writing Without any Purpose
বিশাল বড় একটি প্রবন্ধ লেখে একদিন দেখলাম, এর মূল বক্তব্য নিজেই খুঁজে পাচ্ছি না! অথবা দেখি, সারবক্তব্য থাকলেও তা অস্পষ্ট। কোন মেসেজ নেই, বিশ্লেষণ নেই। লেখকদের কী করতে হবে তা বলা মুশকিল, তবে ব্লগারদেরকে সুনির্দিষ্ট বিষয় ও বিশ্লেষণ ছাড়া লেখা দিলে পরে পস্তাতে হয়। (কী আর কমু!)
[ব্লগে লিখতে গিয়ে কিছু উপলব্ধি আসলো – সেটাই শেয়ার করলাম। পাঠক ব্রাকেটের কথাগুলোতে লেখকের অবস্থান বুঝতে পারবেন। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, আধুনিক ব্লগারদের শক্তি সামর্থ্যে আর সম্ভাবনায়। বিশ্বাস করি, ছাপার অক্ষরের চেয়ে ব্লগারের লেখার শক্তি অন্যরকমভাবে বেশি, কারণ এখন বইয়ের পাতার চেয়ে কম্পিউটারের স্ক্রিনে মানুষ বেশি দৃষ্টি রাখে। তাই, এবিষয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।]
.
.
**প্রথম আলো ব্লগে পাঠক প্রতিক্রিয়া।
২১ রকমের ব্লগার: আপনি কেন ব্লগিং করেন?
একজন জৈষ্ঠ ব্লগারের কেইস স্টোরি তুলে ধরছি যিনি একসময় বাংলা ব্লগোস্ফিয়ারকে মাতিয়েছিলেন তার ‘চতুর্মাত্রিক ব্লগিং উপস্থিতি’ দিয়ে। তার মন্তব্যগুলো বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায়, তিনি অগণিত মন্তব্য করতেন প্রতিদিন এবং প্রায় প্রতিটি ব্লগপোস্টে। ২০০৮-২০০৯ সালে তিনি চরম হিট একজন ব্লগার ছিলেন এবং তিনি পোস্ট দিলেই মন্তব্যে ইমোতে ভরে যেতো। পোস্ট ৯২০, মন্তব্য পেয়েছেন ৯০৩৫, মন্তব্য করেছেন ১১২১০, তিনি ব্লগিং করছেন ৪বছর ৩মাস ধরে। একটি ব্লগে তার শেষ দু’বছরের পরিসংখ্যান এরকম: ২০১১ তে ৮১ পোস্ট এবং ২০১২ তে ১৩ পোস্ট। তিনি গত ৮মাস ধরে কোন পোস্ট দিচ্ছেন না। মন্তব্যও করছেন না। তিনি ব্লগের ইহজগতে আর নেই! আসার সম্ভাবনাও খুব একটা দেখছি না। আমি খুব কৌতূহলী হয়ে দেখলাম বড়ভাইয়ের বিদায়ের কারণটি কী? দয়া করে কেউ তার নাম জিজ্ঞেস করবেন না।
তার ব্লগধাম ত্যাগ করার প্রধান কারণ হিসেবে আমি যা দেখেছি তা হলো, নিজস্ব কোন বিষয় ছিলো না তার লেখার। তিনি স্বভাবগতভাবে লেখক বা কবি নন। প্রবাসীও নন যে দেশের মানুষের সাথে ভাব-বিনিময়ের কোন আলাদা আকুতি থাকবে। হরেক রকমের লেখা নিয়ে তিনি হাজির হতেন এবং প্রায় প্রতিটি পোস্টেই প্রচুর হিট পড়তো, শুধু হিট পড়তো না তার মনে, কারণ ব্লগিং করার কোন উদ্দেশ্য বা প্রতিশ্রুতি ছিলো না তার। মূলত তিনি ফেইসবুকের স্ট্যাটাস দিতেন ব্লগপোস্টের মাধ্যমে। তিনি একজন উন্নতমানের ফেইসবুকার, যিনি ফেইসবুকের স্ট্যাটাস লিখতেন বাংলায় এবং বিস্তৃতভাবে। মজার মজার ছবি যুক্ত করে তিনি সহব্লগারদেরকে বিনোদিত করতেন। ব্লগোজগৎ ত্যাগ করার পেছনে হয়তো তার সাংসারিক বা জাগতিক ব্যস্ততা থাকতে পারে। তবে তার প্রোফাইল অনুসন্ধান করে এরকম একটি উপসংহারে আসা যায় যে, ব্লগিং-এর জন্য আলাদা কোন উদ্দেশ্য তার ছিলো না একান্তই বিনোদন ছাড়া। (এখন আমি আমারে নিয়া চিন্তাইতেছি! আমিও কি তবে কয়েকদিন পরে ‘নো মোর’ হয়ে যাবো?)
লক্ষ্য ছাড়া লেখা বেশিদিন এগোয় না। উদ্দেশ্যবিহীন যাত্রা গন্তব্যে পৌঁছানোর তাগিদ থাকে না – পৌঁছালেও বুঝতে পারা যায় না। উদ্দেশ্যবিহীন ব্লগিং করলে একসময় দেখা যাবে এটি আর ভালো লাগছে না। কবি-সাহিত্যিকদের কথা আলাদা – তারা তো নিজের অভ্যন্তর থেকেই অনুপ্রাণিত লেখক। লেখার বিষয় এবং পাঠক যদি আপনার নির্দিষ্ট করা থাকে, তবে কে আপনার লেখনীকে বন্ধ করতে পারে? পরবর্তি অনুচ্ছেদগুলোতে ব্লগারের উদ্দেশ্য নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করা হলো। এবিষয়ে সহব্লগারদের মতামতের খুব দরকার।
ব্লগিংয়ের উদ্দেশ্য
ব্লগিং এখন আর দিনপঞ্জিতে সীমাবদ্ধ নয় সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০১২ সালের ব্লগ ডে’তে বলা হয়েছে: ব্লগিং হলো আগামি দিনের গণমাধ্যম – আগামি দিনের নয় সেটা আজই হয়ে গেছে। ব্লগাররা আজকাল উন্নত লেখা ও লেখার মান দিয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে আকৃষ্ট করছেন এবং তাদের বিষয়ে জনমত সৃষ্টি করে চলেছেন।
একজন পেশাদার ব্লগার নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন সমাজ সংসার দৈনন্দিন জীবন রাজনীতি অর্থনীতি পরিবেশ অধিকার আর প্রকৃতি নিয়ে। ব্লগ পোস্ট দিয়ে তারা অবগত করছেন, অনুপ্রাণিত করছেন, উজ্জীবিত করছেন, সচেতন করছেন, সঞ্জীবিত করছেন এবং জাগিয়ে তুলছেন পাঠককে। লেখার আবেদন দিয়ে তারা একত্রিত করছেন, সংগঠিত করছেন আর সমাজ পরিবর্তনের আহ্বান জানাচ্ছেন। তাদের ব্লগসাইটকে অগণিত পাঠক বুকমার্ক করছেন, পড়ছেন, মন্তব্য দিচ্ছেন, প্রিন্ট করছেন আর অন্যত্র রেফার করছেন। একজন পেশাদার ব্লগার নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠছেন। পত্রিকা তার অনুমোদন হারাচ্ছে বা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ব্লগার টিকে আছেন সগৌরবে! আমরা কি ‘সেইরহোম’ একজন ব্লগার হয়ে ওঠতে পারি না?
ব্লগারদের উদ্দেশ্যভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ
নিচে প্রচলিত কিছু ব্লগারের একটি ‘বানানো শ্রেণীভেদ’ উপস্থাপন করা হলো। এতালিকার উদ্দেশ্য হলো পারপাস-ড্রিভেন ব্লগারদেরকে খুঁজে বের করতে সাহায্য করা। পাঠকের কাছেই থাকলো এ দায়িত্বটি। সকলেরই একটি উদ্দেশ্য আছে, কারও উদ্দেশ্য ক্ষণস্থায়ী আবার কারও উদ্দেশ্য সুদূরপ্রসারী।
১) রাজনৈতিক ব্লগার: তারা একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করেন অথবা নিরপেক্ষভাবে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেন।
২) পরিব্রাজক ব্লগার: ভ্রমণপিপাসু ব্লগার, যিনি জীবনের অধিকাংশ সময় ভ্রমণে কাটাতে চান।
৩) ফটোগ্রাফার ব্লগার: পেশাদার/অপেশাদার আলোকচিত্রী, তিনি প্রকৃতি ও জীবনকে তুলে ধরেন পাঠকের জন্য।
৪) দিনলিপি ব্লগার: দৈনন্দিন জীবনের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে ব্লগিং করেন এবং নিজের অন্তঃদৃষ্টি দিয়ে অন্যকেও আলোকিত করেন।
৫) পারিবারিক ব্লগার: পারিবারিক জীবন নিয়ে তিনি লিখতে শুরু করেন, টিকে থাকতে পারলে এখান থেকেই লেখক!
৬) বিপ্লবী ব্লগার: একটি রাজনৈতিক বা সামাজিক মতাদর্শ নিয়ে জ্বালাময়ী লেখা দিয়ে পাঠকের মনে বিপ্লব সৃষ্টিতে সচেষ্ট।
৭) আইটি ব্লগার: প্রযুক্তির সর্বশেষ আপডেট দিয়ে তিনি পাঠককে হালনাগাদ করেন।
৮) দার্শনিক ব্লগার: ধর্ম বিশ্বাস অবিশ্বাস নিয়ে তারা লেখেন, যদিও সকল ব্লগে তাদের স্থান হয় না।
৯) সাংবাদিক ব্লগার: নিত্য-নতুন সংবাদ নিয়ে আসেন পাঠকের কাছে, যার অনেক সংবাদ প্রচলিত মাধ্যমে পাওয়া যায় না।
১০) সংবাদ-বিশ্লেষক ব্লগার: চাঞ্চল্যকর বা চলমান ঘটনাবলীর নিজস্ব বিশ্লেষণ দিয়ে পাঠককে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন।
১১) নিউ আইডিয়া ব্লগার: প্রযুক্তি বা সামাজিক সমস্যা সমাধানে নতুন ধারণা বা নতুন আবিষ্কার নিয়ে লেখেন তিনি।
১২) প্রবাসী ব্লগার: প্রবাসী জীবন নিয়ে মূলত লেখেন, তবে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে স্বদেশের মানুষগুলোর সাথে ভাব বিনিময়।
১৩) লেখক ব্লগার: স্বভাবগতভাবে কবি গল্পকার প্রবন্ধকার ছড়াকার গীতিকার অথবা ঔপন্যাসিক, যিনি ব্লগিংকে পাঠকসৃষ্টি বা পাঠযোগ্যতা যাচাইয়ের উপায় হিসেবে দেখেন।
১৪) অধিকার-কর্মী ব্লগার: শিশু নারী ও মানুষের মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন, যার লেখায় পাঠক সচেতন হন নিজের অধিকার সম্পর্কে।
১৫) নারীবাদী ব্লগার: অধিকারকর্মী থেকে তারা একটু ব্যতিক্রম এজন্য যে তারা একটু বেশি আগ্রাসী, একটু বেশি প্রতিক্রিয়াশীল।
১৬) পুরুষবাদী ব্লগার: লেখায় কৌতুকে দৃষ্টান্তে ফুটে ওঠে নারীর প্রতি অবজ্ঞা, নারীর অস্তিত্বে অসম্মান, তাদের পোস্টে বেশি হিট পড়ে।
১৭) সাংগঠনিক ব্লগার: এরা স্বভাবগতভাবে সাংগঠিনক মানসিকতাসম্পন্ন। একটি সমস্যার সমাধানে মানুষ জড়ো করতে তারা ওস্তাদ।
১৮) ফেইসবুক ব্লগার: এরা প্রচলিত অর্থে ব্লগপোস্ট দেন না, স্ট্যাটাস দেন একটু বিস্তারিতভাবে। সেখানে ছবিও থাকে। মূলত ফেইসবুকিং তাদের উদ্দেশ্য।
১৯) ছাত্র ব্লগার: শিক্ষার্থী ব্লগার, হয়তো এখনও ছাত্র – বন্ধুদের দেখাদেখি ব্লগিং শুরু করেছেন, ছাত্রজীবন শেষে হয়তো ব্লগিং শেষ হবে নয়তো ব্লগিং-এর রকম বদলাবে।
২০) বন্ধু-সন্ধানী ব্লগার: তাদের বন্ধুর খুবই অভাব, ব্যক্তিগত জীবনে বড্ড একাকী! ব্লগপোস্ট দেবার চেয়ে একজন ‘মনের মানুষ’ অনুসন্ধান করা তাদের মূল উদ্দেশ্য। বন্ধু লাভ করার পর ব্লগিং একটি ঐতিহাসিক বিষয় হিসেবে সংরক্ষিত হয়।
২১) আজাইরা ব্লগার: কোন কারণ নেই ব্লগিং করার: কীভাবে-কীভাবে এখানে এসে পড়েছেন তারা নিজেরাই জানেন না। অথবা জানেন কিন্তু মানেন না। তাদের পোস্টের সংখ্যা সন্দেহজনকভাবে কম। “আমি লেখতে জানি না পড়তে জানি” অথবা “ব্লগে আমি নতুন” এরকম টাইপের একটি পোস্ট দিয়ে তারা হাওয়া হয়ে যান, অথবা ক্যাচালের জন্য থেকে যান। কোন কোন অতি-অভিজ্ঞ ব্লগার এরকম একটি ‘আজাইরা নিক’ রেখে দেন দুর্দিনের জন্য!
*সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপিত উপরোক্ত শ্রেণীভেদ নিয়ে ইচ্ছেমতো পর্যালোচনার করার আমন্ত্রণ থাকলো। আরও কিছু প্রকার যুক্ত করারও সুযোগ থাকলো।
শেষ কথা
ব্লগিং নিয়ে বিগত কয়েকটি লেখায় পাঠকের প্রশ্ন দ্বারা দারুণভাবে আক্রান্ত ও চিন্তিত হয়েছি। সহব্লগারদের মন্তব্য এবং টিপ্পনি উভয়ই আমাকে আরও দায়িত্বশীল হতে সাহায্য করেছে। সকল মন্তব্যকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। বিগত কয়েকটি পোস্টে চেষ্টা করেছি গুণগতমান সম্পর্কে সহব্লগারের মনে অন্তত একটি বেদনা সৃষ্টি করতে। ব্লগিংএ ‘সচেতন জনগণের’ অংশগ্রহণ থাকলে সত্যিকারভাবেই দেশে একটি গণমুখী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে এবং জবাবদিহি হবে রাষ্ট্রযন্ত্রগুলো। এজন্য ব্লগারদেরকে তাদের দায়িত্ব ক্ষমতা ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া অতি জরুরি। প্রতিদিন ব্লগে নতুন নতুন নিক নিবন্ধিত হচ্ছে। তাদেরকে যেমন পেশাদারিত্ব অর্জন করতে হবে, টিকে থাকাও তেমনি জরুরি। টিকে থাকার জন্য দরকার নিজের একটি উদ্দেশ্য ও একটি প্রতিশ্রুতি!
.
.
এবিষয়ে প্রাসঙ্গিক লেখাগুলো:
১)) ব্লগার/ অনলাইন লেখক হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের উপায়
২)) সাইবার জগতে কীভাবে করবেন আচার-ব্যবহার?
হৃদ্যতা মইনুল ভাই।শুভকামনা নিরন্তন।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন