Tagged: বই আলোচনা
গীতিকার শফিকুল ইসলাম কোহিনূরের ‘কে বুঝিতে পারে দয়াল’
পাঠক প্রতিক্রিয়া: সফিকুল ইসলাম কোহিনূরের ‘কে বুঝিতে পারে দয়াল’
কে শেখাবে তোমাকে
মহাজ্ঞানী বসে আছে
তোমার এই বুকে। (২)
গীতিকার কোহিনূর বলেছেন, ‘দিলের ভেতর দয়ালের বই’। আমরা যেন সেই বইয়ের পাতা ওল্টাই। অন্য একটি গানে তিনি প্রায় একই কথা বলেছেন: “আমার মন মণ্ডপে যার বসবাস/ সে তো আমার মনতরী” (৩)।
.
ঈশ্বর যদি দেখা দিতো
চিনিতে পারিতাম
আমার রূপে রূপ মিশাইয়া
মিলাইয়া দেখিতাম। (৪)
.
সৃষ্টির রহস্যে লুকিয়ে আছে ঈশ্বর রহস্য। এটি নিজের চেষ্টায় বা ধর্মকর্মে পুরোপুরি সিদ্ধ হয় কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। এজন্য ধর্মকর্মের পাশাপাশি প্রয়োজন একটি নিরহংকার মন। ঈশ্বর প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজন আত্মসংযম ও আত্মসমর্পন। ‘ঈশ্বর যদি দেখা দিতো চিনিতে পারিতাম’ বলে গীতিকার তা-ই বলতে চেয়েছেন। ঈশ্বর সমর্পিত হৃদয়ে দেখা দেন।
.
যেসব কথায় গীতিকারের উপলব্ধি আমার উপলব্ধিকে নাড়া দিয়েছে:
প্রায় সবগুলো গানই আত্মিক ভ্রমণের উপলব্ধিতে ভরা। প্রায় সব গানেই ঈশ্বরপ্রাপ্তির বাসনা। প্রেমের গানটিও গুরু বন্দনায় তিনি শেষ করেছেন। শেষ গানটিতেও তিনি গেয়েছেন, ‘জানিতে চাই গুরু তুমি ভালো আছো নি।’ কোহিনূরের মাতৃবন্দনায়ও সৃষ্টির গৌরব প্রকাশ পেয়েছে। আমার পছন্দের গানগুলো থেকে কয়েকটি উদ্ধৃতি দিচ্ছি। পাঠকের জন্য কিছু বাকি রাখলাম। সব দিচ্ছি না!
.
জীবন দর্শন ও দেহতত্ত্ব
•পৃথিবীতে ভরে আছে/কত জ্ঞানের বই/ ধর্ম-কর্ম সমাজতন্ত্র/ আসল বস্তু কই? [পৃ ২৪]
•আমি আছি তোমার পানে/ এক নিরিখে চেয়ে/ পূবের বেলা পশ্চিমে যায়/ দ্রুত বেগে ধেয়ে। [পৃ ৭৫]
•আমার ভেতর আমি কোনটুক/ তা তো জানি না/ দেহের ভেতর বাস করে যে/ সে কি আপন জনা? [৫৪]
•মন্দিরেতে নাই রে ঈশ্বর/ কে দেখেছে তারে/… [পৃ ৭৪]
•কী বলিবো দুঃখের কথা/ অন্তর জ্বালায় জ্বলি/ সুখের ঘরে বস করে/ মাওলাকে যায় ভুলি। [৮২]
•ঘরের ভেতর বসে রাজা/ কর্মে ব্যস্ত ছয়জন প্রজা/ আঠারো মোকামে তারা/ আদান-প্রদান করে রে। [৪০]
•দেহের মালিক বানায় মোরে/ ভেতরে দিলো মন/ মনের ভিতর বাস করিয়া/ থাকে সে গোপন। [৫৪]
.
মানবতাবাদি কথাগুলো:
•এমন সুন্দর ধরায় দেখি/ রক্তারক্তির খেলা/ মানুষ হয়ে মানুষ মারছে/ রক্তে ভাষায় ভেলা। [পৃ ৫৫]
•আমি তো ভেবে পাই না/ মানুষ কেন শ্রেষ্ঠ/ মানুষ দেখি পশুর অধম/ পশু নয় নিকৃষ্ট। [পৃ ৫৫]
•মানুষে মানুষে পিরিত/ করতো জোড়া জোড়া/ সকল জাতি মিলে করতো/ হিংসা বিদ্বেষ তাড়া। [পৃ ৯৮]
•বনের যত পশু পাখি/ তাদের মধ্যে একই দেখি/ সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে/ মা’ই বাঘের খাদ্য হয়। [পৃ ৮৩]
.
আমরা যারা সফলতার লক্ষ্য নিয়ে উল্টো পথে হাঁটি, তারা পঞ্চাশ-ষাট অতিক্রম করার পর কেবল বুঝতে শুরু করি যে, আসল বিষয়টি অধরাই থেকে গেছে। ‘আসল বিষয়টি’ খুঁজতে গিয়ে গীতিকার কী খুঁজে পেলেন, তারই অনুসন্ধান করেছি আমি তার একশ ছ’টি গানে। গানগুলো সত্যিই সুখপাঠ্য। আরেকটি কথা, আমি দেখেছি, ব্লগের পড়ার চেয়ে বইয়ের পড়া অনেক মনযোগ আকর্ষণ করে এবং আরও বেশি অনুভব সৃষ্টি করে। অর্থাৎ বই এখনও ভারচুয়াল জ্ঞানের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠতে পারে নি!
.
সমালোচনা:
গীতিকার যতটুকু গভীরতায় জীবনকে উপলব্ধি করেছেন, সমালোচনা করার জন্য পর্যাপ্ত গভীরতায় যেতে পারি নি। তবে সাহিত্য হিসেবে শুধু এটুকু বলা যায়, ছন্দ এবং ভাষাগত বিষয়ে কিছু বিচ্যুতি আছে। বানান এবং সাধু-চলিত মিশ্রণের দোষও আছে। কিন্তু এগুলো আমি গণনা করার মতো মনে করছি না। গানে প্রাণ দেবার জন্য ভাষা ও ছন্দে অনেক প্রখ্যাত গীতিকার তাদের লেখায় কিছু বিচ্যুতি এবং কিছু ব্যতিক্রম করেছেন। সেই বিচারে গীতিকার কোহিনূরের গানগুলোও বেশ আরামসে উতড়ে যায়। সমালোচনা শেষ!
.
ব্লগে প্রকাশিত লেখাগুলো সাধারণত অন্য একজন ব্লগারই পড়ে থাকেন। ব্লগার হিসেবে নিবন্ধিত নন এরকম পাঠক অবশ্যই আছেন, তবে তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। ব্লগার পড়েন অন্য ব্লগারের লেখা। লেখার বিষয় বা তাৎপর্য যা-ই হোক আমরা একে বলি, ব্লগ পোস্ট। পড়ার পর কেউ মন্তব্য দেন, কেউ দেন না। অনেকেই মন্তব্য দেন, বিনিময়ে আরেকটি মন্তব্য পাবার জন্য। বিনিময় পাঠক – মানে পড়ার বিনিময়ে পড়া। ‘আপনার লেখা আমি পড়ে দেবো, বিনিময়ে আপনি আমার লেখা পড়ে দেবেন। এখানে বিনিময়ের বিষয়টি হলো মন্তব্য। মন্তব্যে মন্তব্য আনে, যেমন টাকায় টাকা আনে। শুনতে ‘শ্রোতিকটু’ হলেও বাস্তবের সমীকরণটি এরকমই। পাঁচ বছরের পুরাতন ব্লগার, যতই ভালো লিখুন, তিনি অনিয়মিত। তিনি মন্তব্য পাবেন দু’টো! বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে অথবা লেখার তাৎপর্যে আকৃষ্ট হয়ে পড়তে এসেছেন, ব্লগে এরকম পাঠক খুবই কম। পুরো সমাজেই পাঠক কম, ব্লগের পাঠক আসবে কোত্থেকে! ওই রকমের পড়াকে ‘সামাজিক পড়া’ বলা যায়।
.
উপলব্ধির সমান্তরালে না গেলে লেখার মর্ম বুঝা যায় না। ‘সামাজিক’ পড়ায় পাঠক কিছুই উদ্ধার করতে পারেন না। ব্লগার যদি ভালো লেখক হতে চান, তবে ভালো পাঠক তাকে হতেই হবে। ‘সামাজিক পড়া’ যতই জনপ্রিয় হোক না কেন, তাতে আমার সমর্থন নেই। পড়ার জন্য এবং নিজের আনন্দের জন্য যেসব পাঠক ব্লগ পড়েন, তারা মেজদা’র লেখায় শুধুই আনন্দ পাবেন না, জীবনের সত্যও খুঁজে পাবেন।
.
উপসংহারের কথা:
প্রচলিত শব্দাবলী দিয়ে লেখেন বলে মেজদা’র গানগুলো দেখতে সাদামাটা মনে হলেও পড়তে গেলে তা কখনও হালকা মনে হয় নি। বরং মনে হয়েছে, এতে গভীরে তিনি কীভাবে গেলেন! তার অধিকাংশ গানের রচনার সময়টি হলো রাত দু’টা অথবা তিনটা, এমনকি রাত চারটাও! গীতিকার কোহিনূর তার বইয়ের ভূমিকায় কয়েকটি গানের উল্লেখ করেছেন, যা তার দৃষ্টিতে বিশিষ্ট। কিন্তু বিষয়ের গভীরতায় আমি দেখেছি তার প্রতিটি গান আলাদাভাবে বিশিষ্ট। প্রতিটি গান নিয়ে একেকটি প্রবন্ধ লেখা যায়। কিন্তু নিজেকে সংবরণ করেছি – লেখেও আবার কেটে দিয়েছি। ব্লগের পাঠকের বিষয়টি বিবেচনা করে এবং প্রথম প্রকাশিত বইটির প্রসারের বিষয়টি মনে রেখে আলোচনাটি সংক্ষিপ্ত রাখার চেষ্টা করেছি। ব্লগ পোস্টের মত করেই লেখেছি। ভবিষ্যতে কোন প্রিন্ট প্রকাশনায় আরও বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা আছে।
.
ব্লগারদের প্রকাশিত বইগুলো নিয়ে ‘পাঠক প্রতিক্রিয়া’ চলতে থাকবে। এরপর আসছে আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলামের ‘স্বপ্নবাসর’ যা নিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু ব্লগের প্রাজ্ঞ লেখক জমির হায়দার বাবলা পূর্বেই ‘স্বপ্নবাসর’ নিয়ে একটি চমৎকার লেখা উপহার দিয়েছেন। একই বিষয়ে ছড়াকার শহিদুল ইসলাম প্রামানিকও অসাধারণ একটি ছড়া দিয়েছেন। তাই ‘স্বপ্নবাসর’ দ্বিতীয়তে রাখলাম। তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম… পর্বের বিষয়গুলো ক্রমান্বয়ে জানানো হবে।
—————-
(১) গানের শিরোনাম: কে বুঝিতে পারে দয়াল। পৃষ্ঠা ৭।
(২) গানের শিরোনাম: জ্ঞান-বিজ্ঞান আর পুস্তক থেকে। পৃষ্ঠা ২৪।
তার গানের কথাগুলো পড়ে ব্লগেও আমি চমকে ওঠতাম, কিন্তু মন্তব্য দেবার উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করছিলাম।
(৩) গানের শিরোনাম: আমার মন মণ্ডপে যার বসবাস। পৃষ্ঠা ২৫।
(৪) গানের শিরোনাম: মন্দিরেতে নাইরে ঈশ্বর। পৃষ্ঠা ৭৪।
—————-
.
.
.
প্রথম আলো ব্লগে প্রাপ্ত মন্তব্য ============================================
৫৬ টি মন্তব্য






আমার দৌড় তো অভিধান পযর্ন্ত। আমি সত্যি জানি না। তবে জানতে সময় লাগে না। এই জন্য অনেকে মনে করে আমি অনেক কিছু জানি।
আমার মন আরশের দরজায় ঠুকে বলে, মাবুদ ভিক্ষা দাও।
আমি ভিক্ষা পাই। প্রয়োজন হলে নফল নামাজ পড়ে সিজদায় কেঁদে বলি, মাবুদ জ্ঞান দাও।(আজ সিকরেট বলেদিলাম। দয়াকরে আর কখন এমন করে লজ্জা দেবেন্না। আমি সত্যি জানি না। আপনাদের পাশে বসতে বললে আমি সত্যি মাটিতে বসব। কারণ আমি চেয়ারে যোগ্য নয়। মজা করছি না)মুছে ফেলুন | ব্লক করুন

পোষ্ট ভালো লেগেছে।
আমি মেজদার বইটি পড়েছি। আমার কাছেও বেশ মুল্যবান মনে হয়েছে।
খুব হেসে খেলেই মেজদা এই ব্লগেই সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য গান যা আমাদের ভাবনার আকাশকে করবে বিস্তৃত অসীম। যা খুব সহজে বলা হলে অর্থের দিক দিয়ে বেশ গভীর বানী সমৃদ্ধস্যালুট ভ্রাতা মাঈউনদ্দিন ভাইকে





ভাব ছাড়া কেমনে কিমুছে ফেলুন | ব্লক করুন


সাবাস প্রিয় গীতিকার ! সাবাস শব্দ কারিগর ! ……………….।দুজনকেই অধমের সালাম |আশা করি সামনের মেলায় আসলে বইটি কিনবো | ভালো থাকুন মেজদা, ভালো থাকুন প্রিয় মিতা মইনুল ভাই |








আপনার অনেক লেখা আমার পড়া হয়নি। আশাকরি পড়ে ফেলবো সময় করে। পড়ার আগেই অনুচিত হলেও যে কথাটা সাহস করে বলে ফেলতে ইচ্ছে করছে, অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়তো যুক্ত হবে আমার স্বল্প অভিজ্ঞতার ঝুলিতে।শুভকামনা অনিঃশেষ জানবেন। সবসময়।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন


মেজদা ভাই অনেক সুন্দর লিখেন তার কিছু লেখা আমি পড়েছি ,খুবি ভাল লেখেন
আপানাদের দুজন কে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন






মইনুল ভাই অসাধারণ লিখেছেন।দুজনকেই শ্রদ্ধা জানাই।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন


নেব।মেজদাকে শুভেচ্ছা।
সুন্দর লেখার জন্য মাইনুল ভাইকে ধন্যবাদ.উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন




মানুষটা এভাবেই তার সৃষ্টি বাড়াতে থাকুক ।



বাকিগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম ।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন

দুজনের জন্যেই রইলো শুভকামনা —






