Tagged: কবিতা
ছড়া এবং আরও দু’টি অপচেষ্টা
.
.
.
.
//কবি হলেই ভালো হতো//
(কবিদের প্রতি: শুধু ব্লগে এবং এর বাইরে যারা লেখেন!)
কবি হলেই ভালো হতো
বলা যেতো সব
করা যেতো ইচ্ছে মতো
শব্দের কলরব।
কবির আছে চলার সুযোগ
আছে বলার ঝোঁক
কবির আছে সব যোগাযোগ
ক্ষমতাবান লোক।
কবি নামেই সম্মান যতো
তিনি জাতির বিবেক
কবির কথা ওহির মতো
তিনি সত্য নিরেট।
দুখের মাঝে সুখ পেতে চাই
কবির অনুভব
কবি হলেই ভালো হতো
ভাবা যেতো সব।
.
.
//অগোচরে গুহায় একদিন//
সবার অগোচরে
মাতাল স্বামীর মতো
আনমনে ঢুকে পড়লাম
সেই গুহায়,
উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত!
চাঁদের আলোর মতো
স্নিগ্ধ কন্ঠে সেই নারী
অভিবাদন জানায় আমাকে।
জল পান করতে দেয়
একান্ত ভালোবেসে
আর সঞ্জীবনী শক্তি পেয়ে
নবায়িত আমাকে
খুঁজে পাই সকালের সূর্যের মতো।
ধূসর চুলগুলো আবার
কৃষ্ণবর্ণে আচ্ছাদিত করে
অশীতিপর মস্তিষ্ককে।
দেহের সকল অস্থি
এক ঝাঁকুনিতে
যুবার শক্তি ফিরে পায়।
খুঁজো দেহ ঋজু হয়:
ঘুষখোর দারোগাটাকে
এক থাপ্পড়ে থানা থেকে
বেড় করে দিতে এখনই
গুহাত্যাগ করার খায়েশ হয়।
নতুন করে বাঁচার ইচ্ছে জাগে।
দেউলে হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটিকে
আবারও জাগিয়ে তোলার
পথ খুঁজে পাই।
অবিশ্বস্ত দুর্নীতিবাজ
কর্মীগুলোকে আবারও ক্ষমা
করে দিয়ে ফের কাজে লাগাবার
ইচ্ছে হয়।
নতুন আমি নতুন দেহকে
জিজ্ঞেস করে বলি:
কেন আগে আসি নি গুহায়?
বাহিরে তো শুধুই ধ্বংস
আর নিজেকে পীড়ন,
আত্মহনন! নিরন্তর আত্মহনন
এতো ভালো লাগে?
ফেরার পথে রহস্যময়ী
সুধায়: “কেন এসো না?
কেন থাকো না?”
আনমনেই বের হয়ে যাই
নতুন জীবনকে
উদযাপন করার সিদ্ধান্তে।
.
.
//বিকারগ্রস্ত মর্ত্যবাসীদের প্রলাপ সঙ্কলন// (১
কোন কিছু বোতলে আটকে রাখা ভালো নয়
শান্ত থাকো আর ঢালতে থাকো…
সালাদ খেয়ে কেউ মহৎ কিছু লিখেছে এমন নজির নেই
অতএব … ঢালো
এক বোতলে যা আছে পৃথিবীর সমগ্র বইয়েও তা পাওয়া যায় না…
কারণ টুট-টুট-টুট হলো বোতলবদ্ধ কবিতা
পেনিসিলিন মানুষকে সুস্থ করে, কিন্তু টুট-টুট-টুট মানুষকে সুখি করে
ঈশ্বর যে মানুষকে সুখি দেখতে চান,
তার অকাট্য প্রমাণ হলো টুট-টুট-টুট (২
টুট-টুট-টুট খাবার সময় মানুষ পাবেই…
যে খাবারের শেষে টুট-টুট-টুট নেই, তাকে বলা হয় নাস্তা
(তোমরা একে ডিনার বলো কেন?)
আমার এতে নেশা নেই, কসম, শুধুই মাথা ঝিরঝির করলে একটু ঢালি
সন্দেহে পড়লেই আমি টুট-টুট-টুট ঢেলে পান করি
তোমাকে সহ্য করার জন্য আমি যথেষ্ট পান করেছি, এবার বলো!
ভুল করা মানবিক, কিন্তু ক্ষমা করার জন্য টুট-টুট-টুট খেতে হয়
ঢেলে খান, ভালো লাগবে…
ভাষা যখন হারিয়ে যায়, টুট-টুট-টুট তখন কথা বলে
মাঝে মাঝে আমি গোসল করার পরে পান করি
কারণ গোসলের সময় পান করা কষ্টকর।
শুধু দু’টি কারণে আমি পান করি:
যখন আমার মন ভালো থাকে আর যখন মন খারাপ থাকে
শুধু রান্নায় আমি টুট-টুট-টুট ব্যবহার করি; মাঝে মাঝে খাবারের সাথেও মেশাই
আমার কার্যতালিকায় ‘ঢেলে খাওয়ার’ কাজটি লিখে রাখি
তাতে অন্তত একটি কাজ করার গ্যারান্টি থাকে!
টুট-টুট-টুট পান করুন, পানি নষ্ট করবেন না!
টুট-টুট-টুট হলো পানিতে ধরে রাখা সূর্যোলোক (৩
তাড়াতাড়ি আমাকে কিছু ঢেলে দাও,
যেন মনকে সিক্ত করে মহৎ কিছু বলতে পারি (৪
হয় আরেকটু ঢালো, নয়তো সামনে থেকে সরো! (৫
বিজয়ীরা যা যোগ্যতায় লাভ করে, ব্যর্থদের জন্য তা অত্যাবশ্যক! (৬
শান্ত থাকুন এবং এক গ্লাস সাথে রাখুন
জীবনে আসে তাল, যখন আপনি টাল
কোন কিছুই কাজে না দিলে একটু ঘুমিয়ে নিন…
ডাক্তার বলেছেন, আমার এলকোহলে নাকি ব্লাড পাওয়া গেছে!
[ টুট-টুট-টুট= একটি শক্তিশালী তরল পানীয়র কল্পিত নাম ]
.
.
————————– শেষ লেখাটির জন্য কিছু টীকা:
১. লেখাটি শুধু সুবিবেচক পাঠকের জন্য, যিনি নিজের ভালো মন্দ বুঝতে পারেন।
২. সৌজন্যে: বেন্জামিন ফ্রাঙ্কলিন: (১৭০৬-১৭৯০) যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম স্থপতি
৩. সৌজন্যে: গ্যালিলিও গ্যালিলি: (১৫৬৪-১৫৪২) ইটালিয়ান বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ
৪. সৌজন্যে: এরিস্টোফিনিস: (খ্রি/পূ ৪৪৬-৩৮৬) প্রাচীন গ্রিসের রম্য-নাট্যকার
৫. সৌজন্যে: রুমি: (১২০৭-১২৭৩) সুফিবাদি আফগান কবি
৬. সৌজন্যে: নেপোলিয়ান: (১৭৬৯-১৮২১) প্রখ্যাত ফরাসি সেনানায়ক
সামহোয়্যারইন ব্লগে প্রথম প্রকাশ: ৪ এপ্রিল ২০১৬।
ইদানিং রাখাল বালক
১) গন্তব্যহীন সন্তরণ আর কত ভালো লাগে!
.
ইদানিং জীবন সাগরে সন্তরণে
সনাতন আলসেমি আঁকড়ে ধরে…
মনোযোগ মনোসংযোগ ইদানিং
প্রতিনিয়ত প্রতিরোধ করে।
.
ইদানিং সুহৃদ-সঙ্গ রসরঙ্গ
আটকে আর রাখে না…
নিজের সাথে নিজের সঙ্গ
প্রতিবাদী বোধের অঙ্গ
ঝগড়া হলেও রাগে না।
.
ইদানিং গোপন কিছু অনুভবে
বুকের ছাতি থাকে ধোঁয়াচ্ছন্ন…
ছলনার ডাক আর ছদ্ম রোগে!
নিঃসঙ্গতা নীলাকাশে একাকার…
পাখির ডাকে চকিত হৃদয়
ইদানিং ধুকধুক করে বুকে।
.
.
২) সূর্যের পরশ পেলেই বোধগুলো নিশাতুর প্রাণীর মতো সজাগ হয়ে ওঠে। সজীব হয়ে ওঠে; না হয় পালিয়ে যায়। বলা যায় সাবধান হয়ে যায়। পক্ষান্তরে অবাঞ্ছিত বোধগুলো কিছু সময়ের জন্য প্রস্থান করে। এমনকি দিনের বেলাতেও একটু অন্ধকার পেলেই বুকের গহীনের নিষিদ্ধ স্পর্শভুক অনুপ্রাণীগুলো যেন আসকারা পেয়ে যায়। অন্ধকার যদি নাও থাকে, একটু একাকীত্বেই ওদের পোয়াবারো! ঘিরে ধরে একাকী রাখালকে। আর রাখালের কথা তো বলাই বাহুল্য। মাত্র একবার কি দু’বার সে প্রত্যাখ্যান করবে। তৃতীয়বারের আবেদন সে ফিরিয়ে দেয় কীভাবে! কখনও দেয়নিও।
.
তাই রাখাল বালকের জন্য সূর্যালোক শুধু আলো আর তাপের উৎস নয়। এটি তার পাহারাদার। স্পর্শভুক থেকে নিরাপত্তা। কিন্তু কতকাল সূর্যের আলো তাকে পাহারা দিয়ে রাখবে? স্পর্শভুক প্রাণীগুলোর কি মরণ নেই? অতএব এটি এখন শৈশবের ঐকিক অংকের মতো সোজা। অর্থাৎ রাখাল বাবুর বিপদ অবশ্যম্ভাবী। এ যেন নিয়তির নিয়মে নির্ধারিত! আহা, করুণা করারও সময় গেলো বলে!
.
.
[বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রথম আলো ব্লগ থেকে স্থানান্তরিত: ১৪ মে ২০১৪]