ধনী মানুষের স্বভাব যেমন হয়
একশ’ ডলারের নোট দিয়ে চুরুট ধরিয়ে খাচ্ছেন স্যুটেড-বুটেড এক ভদ্রলোক। ছবির পাশে ক্যাপশন ‘ধনী মানুষের স্বভাব’। এই যদি হয় ধনী মানুষের স্বভাব, তাহলে ভিখারি হতে তার বেশিদিন তার লাগার কথা নয়। কিন্তু ছবি যা-ই হোক ক্যাপশন দেখে আমি চমৎকৃত না হয়ে পারলাম না। ধনী মানুষ হতে চাই বা না চাই, স্বভাবগুলো অন্তত জেনে রাখা ভালো। কেমন? তাতে ধনী মানুষকে অন্তত চিনতে সুবিধা হবে। এটা খুব কাজে আসবে। পুরো লেখাটি পড়ে ফেললাম। স্বস্তির বিষয় এই যে, আলোচনা শুধু ধনী মানুষে থেমে থাকে নি। বেশ অনুসন্ধান-সিদ্ধ লেখা বলতেই হবে। উপভোগ্য। কিন্তু লেখাটির গভীরে যাবার আগে দু’জন বিখ্যাত ধনী লোক সম্পর্কে দু’টো কথা না বলে পারছি না।
ওয়ারেন বাফেট পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী। তিনি যখন বলেন, “সস্তা লোকের কাছ থেকে সততা আশা করো না” তখন বুঝতে হবে মানুষের সততা সম্পর্কে তার বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে। এরকম মানুষের অভিজ্ঞতা সকল মানব জাতির জন্য কল্যাণকর। ভারতের টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান রতন টাটা হলেন এ অঞ্চলের প্রধান ধনী ব্যক্তি। তিনি সামাজিক মাধ্যমে একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন ‘অপচয়’ সম্পর্কে। জার্মানির এক হোটেলে খেতে বসে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি অর্ডার দিয়ে খাবার অপচয় করেছিলেন মি. টাটার সঙ্গীরা। এর ফলে পাশে থাকা জার্মান ভদ্রমহিলার সঙ্গে তাদের কিঞ্চিৎ বাদানুবাদ হয়। ফলশ্রুতিতে পুলিশ এসে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। সকল ঘটনার সারবক্তব্য হলো মি. টাটার বন্ধুদের প্রতি জার্মান পুলিশেরর একটি সংলাপ। আমার যতটুকু মনে পড়ে, কথাগুলো ছিল এরকম: “আপনার অর্থ আছে আপনি দেদারছে খরচ করতে পারেন। কিন্তু সম্পদের অপচয় করতে পারেন না, কারণ সম্পদের মালিক জনগণ।” বুঝা গেলো মি. টাটার ধনী হওয়া খুব সহজ ছিল না।
ধনী হওয়া সম্পর্কে আরেকটি মজার ঘটনা মনে পড়ছে। একটি ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিংয়ে নেতৃত্বের মনস্তাত্ত্বিক দিক শেখাতে দানশীলতার বিষয়টি ‘সাব-ইস্যু’ হিসেবে ওঠে আসলো। প্রায় আট বছর পূর্বের পাওয়া ওই প্রশিক্ষণে অনেক প্রাপ্তির মধ্যে ‘দানশীলতা সম্পর্কে শিক্ষাটি’ আমার স্মৃতিতে লেগে আছে। মূল ঘটনা হলো, দানশীলতা তথা উদারতা সম্পর্কে শেখাবার জন্য ভারতের একজন প্রখ্যাত দানবীরকে নির্বাচন করা হয়েছিল ওই বিষয়ে শিক্ষা দেবার জন্য। এত ব্যস্ততার মধ্যেও তাকে পাওয়া যাবার মূল কারণটি হলো, তিনি সেই প্রশিক্ষণদাতা প্রতিষ্ঠানের একজন ট্রাস্টি অর্থাৎ দাতা। নিজে তো দান করেনই, সমগোত্রীয় আরও ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে তিনি দানে অনুপ্রাণিত করেন। দানশীলতা এবং উদারতা যে আমাদের ব্যবস্থাপকীয় নেতৃত্বকে একটি বিশেষ মনস্তাত্ত্বিক মাত্রায় নিয়ে যায়, এটিই ছিল তার লেকচারের প্রধান উপজীব্য। আমাদের মধ্যে একজন কৌতূহলী শিক্ষার্থী আচমকা একটি বড় প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে সকলকে আগ্রহী করে তুললেন। প্রশ্নটি ছিল প্রশিক্ষকের ব্যক্তিগত আয়ের পরিমাণ নিয়ে। আমরা সবাই প্রতিক্রিয়া শোনার জন্য প্রায় নিঃশ্বাস বন্ধ করে বসে আছি। কিন্তু আমাদেরকে আরও ‘হা’ করিয়ে দিয়ে তিনি বললেন, “আমার আয় সম্পর্কে সত্যিকারভাবে আমার কোন ধারণা নেই। মাঝে মাঝে আয়ব্যয়ের হিসাব নেই শুধু বুঝার জন্য যে, কত টাকা আমাকে কর দিতে হবে এবং কত টাকা আমাকে দান করতে হবে।” এবার প্রশ্ন করা হলো, শতকরা কতভাগ তিনি দান করেন। আমার আয়ের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ আমি দানে ও রাজস্ব দেবার জন্য খরচ করি” তার উত্তর। বলা বাহুল্য, আমাদের ব্যাচেও হোমড়া-চোমড়া কিছু নেতা ও ধনী বণিক এসেছিলেন প্রশিক্ষণার্থী হয়ে। আমি একটি বিশেষ ক্যাটেগরিতে সুযোগটি পেয়েছিলাম। একজন ধনী মানুষকে দেখে সেদিন চোখের জ্বালা মিটিয়েছিলাম, তা আজও স্মৃতিতে আছে।
উপরোক্ত দু’টো ঘটনা থেকে ধনী মানুষের স্বভাবের মাত্র কয়েকটি দিক পাওয়া যায়। কিন্তু ‘চুরুট খাওয়ার’ ছবির ওই প্রবন্ধে আমি একটি পুরো তালিকা পেয়েছি, যা পাঠকের উদ্দেশ্যে তুলে ধরতে চাই। সৎপথে ধনী হতে পারলে মন্দ কী! তাতে নিজের প্রয়োজন তো মিটলোই, অন্যকেও সাহায্য করা যায়। নিজের ধন্ বা সামর্থ্য দিয়ে অন্যের বিপদে সাহায্য করার মতো মহৎ কাজ আর কয়টি হতে পারে!
২.
ধনী মানুষের স্বভাবের ফর্দটি দেখে আমি বেশি বিস্মিত হয়েছি। কারণ আমাদের সাধারণ বোধশক্তি থেকেও অতিরিক্ত কিছু ছিল সেখানে। শুধু ধনী হওয়া নয়, একজন সামর্থ্যবান মানুষ হবার নসিহত ছিল। ধনীলোকেরা দৈনিক লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেন; তারা অন্যকে সক্রিয় মনযোগ দিয়ে শুনেন; নিজের দেহের যত্ন করেন; নিয়মিতভাবে মানুষের সাথে মেশেন এবং পরিচয় বৃদ্ধি করেন; টিভি কম দেখেন; প্রতিদিনই কিছু না কিছু পড়েন; নিজের দক্ষতার উন্নয়ন করেন প্রতিনিয়ত; ইতিবাচক মনোভাব রাখেন; অর্থ সংগ্রহ করতে পছন্দ করেন এবং সমগোত্রীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে তার ওঠাবসা করেন। মাত্র দশটি আইটেমের মধ্যে ধনী মানুষের স্বভাবকে আটকে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টিতে চমৎকৃত না হয়ে পারলাম না।
ধনীলোকেরা দৈনিক লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেন: শুধু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এখন আর যথেষ্ট নয়, চাই দৈনিক লক্ষ্যমাত্রা। প্রতিদিনের কাজ কীভাবে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দিবাশেষে তারই হিসেব মেলান ধনী মানুষেরা। সকালের চায়ের মতো প্রতিদিন তারা ছোট ছোট কাজে সফলতার উপলব্ধি পেতে অভ্যস্ত। দিনের কাজের একটি কর্মতালিকা তারা পূর্বের রাতে ঘুমোবার আগেই করে রাখেন।
তারা অন্যকে সক্রিয় মনযোগ দিয়ে শুনেন: ধনীলোকেরা এটি খুব ভালোভাবেই জানেন যে, নিজেকে বুঝাবার চেয়ে অন্যকে বুঝতে পারাটা তাদের সফলতার জন্য বেশি দরকারি। এজন্য তারা অন্যকে প্রাণভরে শুনেন, যাতে তাদের চাওয়া-পাওয়া ও মনোভাবকে বুঝতে পারা যায়। একটি নতুন উদ্যোগ শুরু করতে গেলেও বলার চেয়ে শুনতে হয় বেশি। তবেই সঠিক সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা যায়।
নিজের দেহের যত্ন করেন: তারা মনে করেন, সফলতার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়াম অত্যন্ত দরকারি। দৈনিক ব্যায়ামকে তাই তারা অভ্যাসে পরিণত করেছেন। তাতে যেকোন কাজ তাড়াতাড়ি, সহজে এবং আনন্দের সাথে সম্পন্ন করতে পারেন।
নিয়মিতভাবে মানুষের সাথে মেশেন এবং পরিচয় বৃদ্ধি করেন: মানুষের সাথে পরিচিত হবার উপকারিতা সম্পর্কে ধনী ব্যক্তিরা পুরোপুরি অবগত। তারা জানেন, মানুষের সাগরে সাঁতরেই তাদেরকে কূলে ওঠতে হয়। মানুষ দেখে তারা এগিয়ে যান, আগে থেকেই শুভেচ্ছা দেন এবং নিজেকে পরিচিত করে তোলেন। তাদেরকে সাহায্য করার কথা বলেন। এগিয়ে যান সামনের দিকে এবং নিজেকে আলাদা করে তোলেন। এটিই সফল এবং ধনবানদের বৈশিষ্ট্য।
টিভি কম দেখেন: সফল ব্যক্তিরা বিনোদনের জন্য শুধু টিভিকে বেছে নেয় না। কেউ কেউ আছেন টিভি একদমই দেখেন না। একটি বাক্সের সামনে বসে থাকার চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাদের আছে।
প্রতিদিনই কিছু না কিছু পড়েন: পড়া মানুষকে উন্নত করে, জ্ঞানবান করে এবং পৃথিবীকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা বই পড়া ধনী মানুষদের নিয়মিত অভ্যাস। নিজেকে, নিজের প্রতিষ্ঠানকে এবং নিজের ব্যবসায়কে উন্নত করার জন্য হাজারো রকমের বই আছে পড়ার।
নিজের দক্ষতার উন্নয়ন করেন প্রতিনিয়ত: স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্য নিজেকে সে পর্যায়ে আগে নিয়ে যেতে হয়। নিজের কাজে ওস্তাদ হতে গেলে নিজের প্রতিভাকে নিয়মিত ধার দিতে হয়। একটি পদোন্নতি পেতে গেলেও নিজেকে সে পর্যায়ে আগে উন্নীত করতে হয়। যারা আজ ধনী, তারা নিয়মিত বেড়ে ওঠেছেন।
ইতিবাচক মনোভাব রাখেন: ইতিবাচক চিন্তা কেবলই একটি অভ্যাস নয়, এটি জীবনের পথ। নেতিবাচকতা এবং নিজেকে ছোট করার চিন্তা থেকে সরে না আসলে তা একসময় মানুষের জীবনী শক্তিকে খেয়ে ফেলে। ধনী মানুষেরা বন্ধুর বিনিময়ে হলেও নেতিবাচক চিন্তাকে ত্যাগ করেন। তারা এমন জায়গায় বসেনই না, যেখানে নেতিবাচক আলোচনা হয়; এমন লেখা পড়েনই না, যা নেতিবাচকতাকে সমর্থন করে। তারা বন্ধুত্বপরায়ন এবং নতুন সুযোগের জন্য প্রস্তুত থাকেন সবসময়।
অর্থ সংগ্রহ করতে পছন্দ করেন: অর্থের চেয়ে কার্যকর সম্পদ পৃথিবীতে আরেকটি নেই। বলা বাহুল্য, অর্থের সঠিক ব্যবস্থাপনা করেই ধনীরা ধনী হন। এটি তাদের প্রধান গুণ। তারা প্রতিটি দিন তিলে তিলে অর্থ সঞ্চয় করেছেন। তারা জানেন কীভাবে নিজেদের খরচকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। খরচ নিয়ন্ত্রণ অর্থ সঞ্চয়ের প্রধান উপায়।
সমগোত্রীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে তার ওঠাবসা করেন: সকলের সাথে সুসম্পর্কের মানে এই নয় যে, সকলের সাথেই সময় ব্যয় করতে হবে। ধনী ব্যক্তিরা জানেন কার সাথে সময় ব্যয় করলে সেটি হবে সার্থক এবং নিজের জন্য উপকারি। তাদের সাথেই তারা সময় কাটান, যারা নিজের কাজকে এগিয়ে নেবার জন্য দরকারি।
শুধু ধনী হবার শিক্ষা হলে বিষয়টিতে আমার মনযোগ থাকতো না। বিষয়টির ব্যাপকতার কারণে মনযোগ দিয়েছি। ধনী হওয়ার চেয়েও একজন সক্ষম মানুষ হওয়া বেশি জরুরি এবং সে শিক্ষা এখানে আছে।
এখানে বলা রাখা দরকার যে, লেখক নিজে ধনী নই এবং সে সম্ভাবনাও খুবই ক্ষীণ! শুধু ধনীদের জীবনাচরণকে তৃতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করে যা পাওয়া গেছে, তা-ই উপস্থাপন করলাম। ফলে লেখাটি পূর্ণাঙ্গ হবার সুযোগ কম। ঠিক এজন্যই উপরোক্ত বিষয়ে পাঠকের মতামত আশা করছি। দয়া করে কেউ বলবেন না, আমি ধনী হতে চাই না, কারণ এটি হওয়া বাধ্যতামূলক নয়।
লেখাটা পড়ে বেশ মজা পাইলাম ভাই 🙂
LikeLike
থেংকু….. 😉
এবং শুভেচ্ছা।
LikeLiked by 1 person
ভাই গরু কেনা একটা লেখা দিছি পড়ে দেখার আমন্ত্রন
LikeLiked by 1 person
ভাইজান পড়ে খুবই মজা পাইলাম,,,,আর ভাল মানুষ হ্ওয়ার খুব ইচ্ছা হয়!!!!!!!!!!!!!!!
LikeLike
হাহাহা… ভালো থাকবেন, কবি 🙂
মন্তব্যে ধন্য হলাম…
LikeLike
জল মন্থনে সাঁঝ বেলার বিবর্ণ মায়া
পানকৌড়ি মতো
শুদ্ধ ডুবুরী হওয়া, আর হল না
উভয় সুখে দ্বিচারিনী বটে
পেটের জন্য বোধ হয়; শ্রেণী বৈশ্যমে ভুগে না
দ্বিচারিনীর যন্ত্রণা সয় না
ওস্ঠাগত বেদনায় মুচরে পরে না
পেটে পাথর বাঁধে না;
সহজাত পানকৌড়ি ডুবুরী
ডুবুরী জল তলে সদ্য সাদৃশ্য
গিলে গিলে;
জলের ভিতর ভুট ভুট বাবুল উঠে
করতলে নিঃশ্বাস এঁটে, এঁকে বেঁকে
জল সিঞ্চনে উঠে ডাঙায় জীবন বাঁচে
কালো পালকে শেওলা প্রলেপ
জল মন্থনে সাঁঝ বেলার বিবর্ণ মায়া।
১৪২২/২৯, ভাদ্র/শরৎকাল।
LikeLike
এ যে দেখছি জলকেলি কবিতা 🙂
যথারীতি দারুণস…..
LikeLike