অখণ্ড জীবনের খণ্ডিত ভাবনাগুলো!
বিরহ যন্ত্রণা সহ্য হয় কারণ চলমান জীবনে এরকম দৃষ্টান্তের অভাব নেই। সঙ্গী আছে সহমর্মীতা জানাবার। তাছাড়া আছে, উপন্যাস কবিতা আর কথা উপকথা। বিচ্ছেদের কষ্টে আছে মজনু হবার স্বাদ আর দেবদাসের অনুভব। বিচ্ছেদ এনে দেয় ক্লিওপেটরা’র এন্তোনি হবার গৌরব। বন্ধুরা সান্ত্বনা দেয় সাহচর্য্য দেয়, আত্মীয় দেয় অনুকম্পা। বান্ধবীরা এগিয়ে আসে শূন্যস্থান পূরণ করতে। বিচ্ছেদে আছে না-পেয়ে-না-পাওয়ার সুখ। আছে আক্ষেপ করে সময় কাটানোর উপলক্ষ। কিন্তু মিলনে কী আছে? সত্যি কি কিছু আছে? একি মিলনান্তক বিচ্ছেদ নয়? নাকি বিয়োগান্তক মিলন? আমি বলি মিলনান্তক বিচ্ছেদ। এখানে কেউ নেই সাথে। আছে পেয়ে-ও-না-পাওয়ার দুঃসহ বেদনা। এ থেকে কি মুক্তি নেই?
——–
দুই) জান বাঁচানো কি সততার চেয়েও মূল্যবান? মাঝে মাঝে আমার খটকা লাগে। ভুল হলে, দয়া করে, কেউ শুধরে দিন। ‘জান বাঁচানো ফরজ’ কথাটি কি ভালো থাকার বাধ্যবাধকতাকে দুর্বল করে দিচ্ছে না? ‘সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা’ কথাটি কি তবে সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়? মানে কি আরও কিছু দিন বেঁচে থাকার জন্য আমি দু’একটি মিথ্যাচার করতে পারবো? মৃত্যুর ভয়ে তবে কি আমি অপরাধী হয়ে গেলাম না? মৃত্যু ভয় থাকলে অপরাধ কম হবে, কথাটি এখানে কতটুকু অকাট্য? এখানে মৃত্যুভয়ই আমাকে অপরাধী হতে বাধ্য করলো না? মাঝে মাঝে, সহজ বিষয়গুলোকে বড্ড কঠিন লাগে!
——–
তিন) পৃথিবীতে মানুষের আগমন কি উদ্দেশ্যহীন? মানুষের জন্ম কি কোন দুর্ঘটনার ফল? কেবলই কি বিবর্তনের ফল? ‘চিতাতেই কি সব শেষ?’বিবর্তনবাদীরা ঠিক নাকি সৃষ্টিতত্বের বিশ্বাসীরা ঠিক? আমরা কাজ ছাড়া থাকতে পারি না: কেন পারি না? কাজ কি শুধুই আমাদের জীবিকা অর্জনের জন্য? তাহলে অবসর গ্রহণ করার পরও কেন মানুষ কাজ খুঁজে বেড়ায়? কয়েদিরা কেন কাজের জন্য ব্যাকুল হয়? কাজ যদি মানুষের নিয়তি হয়ে থাকে, তবে তো বলা যায় জীবনের উদ্দেশ্য আছে! এখানে বিবর্তনবাদীদের যুক্তি কোথায়?
——–
চার) কাউকে দায়িত্বজ্ঞান শেখাবার জন্য কি ‘দায়িত্বশীল’ হতে হয়, নাকি ‘দায়িত্বহীন’ হলে ভালো? সন্তানের বাবা হবার পর বুঝতে পারলাম যে বেশি দায়িত্বশীল হওয়া পরিবারের জন্য মঙ্গলজনক নয়। মূলত বিয়ের পরই বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছিলাম, কিন্তু তখন বিষয়টিকে এস্কেপিজমের মতো লেগেছিল। পরিবার হবার পর দেখতে পেলাম, আমি স্বাভাবিক মাত্রায় দায়িত্বশীল হলেও পরিবারের সদস্যরা আমার ওপর নির্ভরশীল হতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। এতে কোনভাবেই একটি পারস্পরিক দায়িত্বশীল পরিবার গড়ে ওঠবে না। সিদ্ধান্ত নিলাম যে, ছোট ছোট বিষয়ের দায় নিতে আমি ভুলে যাবো, অথবা উদাসীনতার ভাণ করবো। কিন্তু আমি কি লাইনে আছি? আমি ক্রমেই দায়িত্বহীন হয়ে যাচ্ছি না?
——–
পাঁচ) আত্মবিশ্বাস কি একটি সামর্থ্য নাকি সিদ্ধান্ত? ভালো পোশাক-পরিচ্ছদ, ভালো কমন সেন্স এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়েও অনেকে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হতে পারে না। অথচ পরিস্থিতিতে পড়ে যখন মানুষ দেখে যে, আত্মবিশ্বাসী না হলে তার বিপদ আছে (ধরুন: আইনপ্রয়োগকারীদের অযাচিত প্রশ্নের মুখে পড়লে), তখন শুধু সিদ্ধান্ত নিয়েই সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। পোশাক-আশাক, শিক্ষা-দীক্ষা তখন গৌন হয়ে যায়। সময়ই বড় শিক্ষক। কিন্তু সময় নাকি ‘পরিস্থিতি’ নামেই মানুষের সামনে আসে!
সব সময় কি সত্য বলা যায় ।
LikeLike
সত্য কথা বলেছেন ভাই!
অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা….
LikeLike