Netiquette: ‘সাইবার জগতের আচার-ব্যবহার’ কেমন হওয়া উচিত?
সমাজে চলতে ‘এটিকেট’ জানতে হয়, তেমনি সাইবার সমাজে নিজেকে মানিয়ে চলতে হলে নেটিকেট জানতে হয়। ভালো নেটিকেট জানা মানে হলো অন্যের গোপনীয়তাকে শ্রদ্ধা করা; ইন্টারনেটে এমন কিছু না করা যাতে অন্যের অনুভুতিতে আঘাত পায় বা হতাশ হয়। তিনটি বিষয়ে নেটিকেট বেশি প্রত্যাশিত, তা হলো: ইমেল, অনলাইন চ্যাটিং এবং নিউজগ্রুপ। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যারা বেশি বেশি ছবি বা পোস্ট বা মন্তব্য দিয়ে অন্যের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করে, বা ফ্লাডিং করে – তাদের নেটিকেট জানা নেই। অল্প পরিচয়েই আপনি কারও ইমেল আইডি বা ফোন নম্বর চাইতে পারেন না, যেমন পারেন না তাদের ব্যক্তিগত তথ্যাদি জানতে। (টেক টার্মস ডট কম)
.
ইন্টারনেট-এ যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে যেসব আচার-নিষ্ঠতা মেনে চলতে হয়, তাকে বলা হয় নেটিকেট বা নেটওয়ার্ক এটিকেট।
.
আভিধানিক অর্থ:
– ইন্টারনেটে অনানুষ্ঠানিক (ইনফরমাল) আচার-ব্যবহার। কলিনস ইংলিশ ডিকশনারি
– কমপিউটার-ভিত্তিক, বিশেষত ইন্টারনেটে, যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেসব এটিকেট বা আচরণবিধি মেনে চলা হয়। ডিকশনারি ডট কম
– ইন্টারনেটের মাধ্যমে সামাজিক এবং অফিশাল যোগাযোগের ক্ষেত্রে সাধারণ বিধিগুলোকে নেটিকেট বলে।
.
১০টি প্রচলিত নেটিকেট:
১) বানান শুদ্ধ রাখতে হবে (Spell check)। বানান বা ভাষাগত ভুলে পরিপূর্ণ একটি পোস্ট আপনি সহজভাবে মেনে নেবেন না। পোস্টদাতার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আসবে। আপনার ক্ষেত্রেও একই নীতি প্রযোজ্য। লেখা প্রস্তুত করে ‘এন্টার’ দেবার পূবে দেখে নিন বানানগুলো, শব্দগুলো, যতিচিহ্নগুলো ঠিক ঠিক স্থানে আছে কি না। ‘না’ একটি ছোট শব্দ – অনেক সময় যেখানে ‘না’ হবার কথা সেটি না থাকলে বিপরীত পরিণতি ডেকে আনবে!
২) ইংরেজিতে লেখার ক্ষেত্রে – সকল শব্দ বড় অক্ষরে লেখা যাবে না (No all caps)। এটি একটি অতি প্রচলিত নেটিকেট। উচ্চস্বরে চিৎকার করে সামাজিক যোগাযোগ হয় না। ইন্টারনেটে যখন আপনি একটি পুরো বাক্যে ক্যাপিটাল লেটার দিয়ে লেখেন, তখন এর মানে দাঁড়ায় – আপনি চিৎকার করছেন!
৩) সত্য কথাটি বলতে হবে (Tell the truth)। ইন্টারনেটে একটি কথার বেশ মূল্য আছে: সত্যই আপনাকে মুক্ত রাখবে। একটি মিথ্যা অনেকগুলো স্থানে মিথ্যা বলতে আপনাকে বাধ্য করবে। সবজায়গায় সমভাবে মিথ্যা না বললেই পড়বেন ফ্যাসাদে। অন্য কোন খারাপ উদ্দেশ্য না থাকলে নিজের নাম-ঠিকানা সঠিকভাবে লিখুন, তাতে সর্বোত্তম ইন্টারনেট অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। একাধিক নাম একাধিক অবস্থান নিজের আইপি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করবে অন্য ব্যক্তি/নেটওয়ার্কের মধ্যে।
৪) নিজেকে তুলে ধরতে হবে (Be yourself)। এখানেই সততার আসল পরিচয় – মিথ্যা বলার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সত্য বলা অথবা নিজেকে গোপন রাখার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে প্রকাশ করা। আপনি ‘আপনার’ হয়ে ওঠুন। যদি আপনার ‘আপন সত্ত্বাকে’ পছন্দ না হয়, তবে পছন্দনীয় একটি সত্ত্বায় নিজেকে তুলে ধরুন এবং তা রক্ষা করুন। যা ভালো, তাতে প্রাণ খুলে সম্মতি বা একাত্মতা প্রকাশ করুন। যা খারাপ তা থেকে একশ’ হাত থাকুন!
৫) প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না (Do not flame)। ইন্টারনেটে যারা খারাপ ব্যবহার করে তাদের খুব একটা ক্ষতি হয় না। ক্ষতি হয় তাদেরই যারা এর উত্তর বা প্রতিক্রিয়া করে। ফ্লেমিং মানে হলো ব্যক্তিগতভাবে কাউকে অপমান করা বা অপমানের প্রতিক্রিয়া করা।
৬) স্প্যামিং করা যাবে না (Do not spam)। প্রয়োজন ছাড়া যোগাযোগ করা বা গায়ে পড়ে বার্তা পাঠাতো উভয়ই অগ্রহণযোগ্য। অনাকাঙ্ক্ষিত ইমেল বা পপ-আপ বার্তার উত্তর না দেওয়া একটি উত্তম নেটিকেট। নিজেও অনাকাঙ্ক্ষিত ইমেল বা বার্তা না পাঠানো উত্তম। যদি পাঠাতেই হয়, তবে যথাযথ ভূমিকা ও এপোলজি থাকা বাঞ্ছনীয়। উচ্চ ক্ষমতাধর হ্যাকিংগুলো স্প্যামের মাধ্যমেই হয়। ব্যক্তিগত ইমেল এড্রেসটি সোস্যাল নেটওয়ার্কিং-এর ক্ষেত্রে যত কম ব্যবহার করা যায়, তত উত্তম।
৭) রক্ষণশীল হতে হবে (Be conservative)। প্রবাদে আছে নেওয়ার চেয়ে দেওয়া ভালো। কিন্তু নেটিকেটের ক্ষেত্রে, ঠিক উল্টো – নেওয়া ভালো: অর্থাৎ পোস্ট, ইমেল, বার্তা ইত্যাদি গ্রহণ করুন উদারভাবে। তা আপনার বিভিন্ন কাজে আসতে পারে, কিন্তু ইমেল বা পোস্ট দেবার ক্ষেত্রে যথাসম্ভব কৃপণতা রক্ষা করুন। যদি দিতেই হয়, তাহলে যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত এবং প্রত্যক্ষ করুন আপনার ভাষা। অপ্রয়োজনীয়ভাবে দীর্ঘ করবেন না।
৮) গভীর রাতে ইমেল/বার্তা না পাঠানো উত্তম (Do not send email at night)। স্বাভাবিক মানুষ দিনে কাজ করে, রাতে ঘুমায়। গভীর রাতে যারা জেগে থাকে, তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়। আপনার জীবনাচরণ সম্পর্কে অহেতুক প্রশ্ন ওঠতে পারে। তাই কোন বার্তা বা পোস্টের উত্তর উপযুক্ত সময়ে দেওয়াই ভদ্রজনোচিত হবে।
৯) নিরাপদ সাইটগুলোতে কেনাকাটা করতে হবে (Shop in secure sites)। এই নেটিকেট তাদেরই স্বার্থে যারা অনলাইন শপিং করেন। নিরাপদ এবং পরিচিত সাইটগুলোতে কেনাকাটা করুন, তাতে আপনার ব্যক্তিগত এবং মূল্যবান তথ্যাদি (ক্রেডিট কার্ড নাম্বার, বা ব্যাংকিং পাসওয়ার্ড ইত্যাদি) সুরক্ষিত থাকবে। যারা অনলাইন শপিং করেন না, তারাও নিরাপদ সাইটে ভিজিট করলে ক্ষতি নেই!
১০) নিজস্ব বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করতে হবে (Use discretion)। তথ্য প্রকাশ এবং আদান-প্রদানে নিজস্ব বিচক্ষণতার প্রয়োগ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ নেটিকেট। আপনার প্রোফাইল, পোস্ট, লেখা, ফ্রেন্ডলিস্ট, মন্তব্য ইত্যাদি ‘প্রকাশিত তথ্যের‘ ভিত্তিতেই আপনার ব্যক্তিত্বকে দেখা হয়। আপনাকে ‘লাইভ’ দেখে তা যাচাই করার সুযোগ নেই। আপনি তা-ই, যা ইন্টারনেটে এপর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে। ইন্টারনেটে বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগত তথ্যাদি দেবার প্রয়োজন পড়ে। ‘ডিসক্রিশন’ হলো কোথায় রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং কতটুকু তথ্য প্রকাশ করতে হবে, সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা।
.
.
অধিকাংশ তথ্য নেটওয়ার্ক এটিকেট ডট নেট থেকে সংগ্রহীত।
_______________________________________________________________________________________________________
নেটিকেটের সাথে প্রাসঙ্গিক লেখাগুলো:
১)) ভারচুয়াল সমাজে কীভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করবেন…
২)) সাইবার সমাজে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের উপায়
4 comments