মন্তব্যের কাঠামো: ভারচুয়াল সমাজে কীভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করবেন?
ব্লগ এবং ফেইসবুকে অনেক কিছুই আমরা দেখি এবং পড়ি। সেগুলোর কোনটিতে মজা পাই, কোনটিতে তথ্য পাই আবার কোনটিতে চেতনা পাই। খুব বেশি হৃদয়কে নাড়া দিলে তার একটি প্রতিক্রিয়া জানালে পোস্টদাতা আনন্দে আহ্লাদিত হন। সৃজনশীল মন্তব্য দেওয়ার উপায় নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আপনার সামান্য একটি প্রশংসায় একজন মানুষ প্রেরণা পেতে পারেন অনেক দূর যাবার। কিন্তু মন্তব্য করতে গিয়ে আমরা অনেকেই বুঝে ওঠতে পারি না, কীভাবে লিখলে তা প্রাসঙ্গিক হবে। শুধুই নিজের পোস্ট দেওয়া নয়, ভারচুয়াল সমাজে অন্যের পোস্টে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক আচরণ।
বিভিন্ন বাংলা ব্লগ এবং অন্যান্য সামাজিক সাইটগুলোতে প্রতিক্রিয়া প্রকাশের প্রচলিত কাঠামোগুলো নিচে আলোচনা করা হলো। মন্তব্যের উদাহরণ বাস্তব পরিস্থিতি থেকে নেওয়া হলো। দৃষ্টান্ত: “আমি বাঙালি তাই আমি বিদ্রোহী” শ্যাম পুলক।
.
১) মন্তব্য: লেখা/পোস্টের প্রতি সহজাত প্রতিক্রিয়া।
উদাহরণ: ভাললাগা রইলো…শুভেচ্ছা আপনাকে… (গোলাম মোস্তফা)
.
২) প্রতিক্রিয়া: পাঠকের মনোভাবের রিফেলেকশন।
উদাহরণ: বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক। লাল সালাম। (নাসির আহমেদ কাবুল)
.
৩) সহমত: লেখা বা পোস্টের বিষয়ে পাঠকের সম্মতি।
উদাহরণ: কবিতার বক্তব্যে শতভাগ সহমত।
.
৪) উদ্ধৃতি: পোস্টের আকর্ষণীয়/পছন্দনীয় বিষয়ের উদ্ধৃতি।
উদাহরণ: “আসে ব্রহ্মার বর,/আসে অবতারের পর অবতার।
আমি লোকায়ত রাজা মহারাজা পরমেশ্বর।/আমি চার্বাক, আমি নিজেরেই নিজে ভাবি ঈশ্বর।”
-ভাল প্রচেষ্টা, সুন্দর প্রয়াস এবং দারুন কবিতা। (সান্তুইয়া)
.
৫) অভিমত: লেখার বিষয়ে পাঠকের মতামত।
উদাহরণ: বাঙালী বিপ্লবী জাতি। বিদ্রোহ বাঙালীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তার প্রমাণ একুশ, ঊনসত্তর, একাত্তর, নব্বই। আপনার কবিতায়ও বিদ্রোহের তুফান, বিপ্লবের গন্ধ। (ঘাসফুল)
.
৬) মূল্যায়ন: লেখার বস্তুনিষ্ঠতা বা প্রভাবিত করার ক্ষমতার পরিমাপ। এক প্রকার বিচার, বলা যায়।
উদাহরণ: কবিতাটি বেশ ভাল লেগেছে, বিদ্রোহের অবয়ব বেশ ভালভাবে ফুটেছে, ২য় স্ট্যানজাসহ বাকী অংশের মধ্যে ইন্ডিয়ান মিথের ব্যবহার ভাল লেগেছে, পুরো কবিতাটির গতিময়তা লক্ষণীয় বিষয়। (আশরাফুল কবীর)
.
৭) তুলনা: সমপর্যায়ের অন্য কোন লেখার সাথে তুলনামূলক বিশ্লেষণ।
উদাহরণ: দীর্ঘ কবিতা! নজরুলের ছোয়া আছে। (মোস্তাফিজুর রহমান)
.
৮) স্বীকৃতি: লেখক/পোস্টদাতার প্রচেষ্টার স্বীকৃতি।
উদাহরণ: শুধু ‘আমি বাঙালি তাই বিদ্রোহী’ এতোটুকু বলে শেষ করলেও হতো একটি মহাকাব্য। তবু আপনি আরও সুন্দর কিছু সত্য তুলে গেঁথেছেন একসাথে। (মাঈনউদ্দিন মইনুল)
.
৯) আত্মমূল্যায়ন: লেখা/পোস্টের বিপরীতে পাঠকের আত্মমূল্যায়ন।
উদাহরণ: দারুণ বিদ্রোহের কবিতা শ্যাম পুলক। পড়তে যেয়ে নিজের রক্ত যেন টগবগিয়ে উঠেছে। (ঘাস ফুল)
.
১০) পছন্দ/লাইক: লেখা/পোস্টের কোন বিষয়ে পাঠকের ‘পছন্দ’।
উদাহরণ: হুম!
.
উপরোক্ত বিষয়গুলোকে কাঠামো বললাম এজন্যে যে, কেউ কেউ শুধু একটি বিষয় দিয়েই মন্তব্য শেষ করেন। মন্তব্য, প্রতিক্রিয়া, সহমত, উদ্ধৃতি, অভিমত, মূল্যায়ন, তুলনা, স্বীকৃতি, আত্মমূল্যায়ন এবং পছন্দ – সবগুলোই একটি মন্তব্যে থাকতে পারে। যত বেশি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, তত সমৃদ্ধ হয় একটি মন্তব্য।
তাত্ত্বিক কথায় অনেক কিছু স্পষ্ট হয় না। বাস্তব উদাহরণ ছাড়া অনেক কিছু গ্রহণও করা যায় না। তাই, সহব্লগার শ্যাম পুলকের সুন্দর কবিতাটি বেছে নিলাম – শুধুই মন্তব্য বিশ্লেষণের জন্য। উপরোক্ত সবগুলো কাঠামোকে একসাথে ব্যবহার করলে মন্তব্যটি মোটামুটি এরকম দাঁড়ায়-
//হুম…দারুণ বিদ্রোহের কবিতা, শ্যাম পুলক। পড়তে যেয়ে নিজের রক্ত যেন টগবগিয়ে উঠেছে। কবিতার বক্তব্যে শতভাগ সহমত।
“আসে ব্রহ্মার বর,
আসে অবতারের পর অবতার।
আমি লোকায়ত রাজা মহারাজা পরমেশ্বর।
আমি চার্বাক, আমি নিজেরেই নিজে ভাবি ঈশ্বর।”
-ভাল প্রচেষ্টা, সুন্দর প্রয়াস এবং দারুন অনুভব।
-শুধু ‘আমি বাঙালি তাই বিদ্রোহী’ এতোটুকু বলে শেষ করলেও হতো একটি মহাকাব্য। তবু আপনি আরও সুন্দর কিছু সত্য তুলে গেঁথেছেন একসাথে।
-দীর্ঘ কবিতা! নজরুলের ছোয়া আছে। বাঙালী বিপ্লবী জাতি। বিদ্রোহ বাঙালীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তার প্রমাণ একুশ, ঊনসত্তর, একাত্তর, নব্বই। আপনার কবিতায়ও বিদ্রোহের তুফান, বিপ্লবের গন্ধ।
-কবিতাটি বেশ ভাল লেগেছে, বিদ্রোহের অবয়ব বেশ ভালভাবে ফুটেছে, ২য় স্ট্যানজাসহ বাকী অংশের মধ্যে ইন্ডিয়ান মিথের ব্যবহার ভাল লেগেছে, পুরো কবিতাটির গতিময়তা লক্ষণীয় বিষয়।
ভাললাগা রইলো…শুভেচ্ছা আপনাকে… বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক। লাল সালাম।//
.
.
________________________________________________
তথ্যসূত্র: “আমি বাঙালি তাই আমি বিদ্রোহী” শ্যাম পুলক
১) শ্যাম পুলক
২) গোলাম মোস্তফা
৩) নাসির আহমেদ কাবুল
৪) সান্তুইয়া
৫) ঘাস ফুল
৬) আশরাফুল কবীর
৭) মোস্তাফিজুর রহমান
5 comments