বিপুল ভট্টাচার্য – একজন সৈনিকের পতন: শ্রদ্ধার্ঘ্য
তিনি বিপুল ভট্টাচার্য, যাকে আমি পড়ে চিনেছিলাম। তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদ তাকে ‘মুক্তির গানের প্রাণ’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। বিপুল না থাকলে কোন মুক্তির গান হতো না। স্বদেশের অন্তরবিদীর্ণ-করা গানগুলোকে প্রাণ দিয়েছিলেন বিপুল তার যাদুকরি কণ্ঠ দিয়ে।
গতকাল টিভিতে সংবাদটি শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। বিশ্বাস করা কঠিন ছিলো। আজ ডেইলি স্টারে ‘ফল অভ্ এ সোলজার’ শিরোনামের খবরটি পড়ে নিশ্চিত হলাম: একাত্তরে শব্দসৈনিক এবং ‘মুক্তি সংগ্রাম শিল্পী সংস্থার’ অন্যতম প্রধান শিল্পী বিপুল ভট্টাচার্য আর নেই। ফুসফুস ক্যানসারের সাথে ২০১০ থেকেই যুদ্ধ করছিলেন বিপুল। গানও বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো আর আগে থেকেই।
ডালিয়া নওশিন, গানের দলের সহশিল্পী, জানালেন, বিপুল তখন খুবই তরুণ। খুবই উদ্যমী এবং আনন্দোচ্ছ্বল ছিলেন। দেশের দুর্যোগ পরিস্থিতি নিজের দরদি কণ্ঠ দিয়ে বিপুল বড় শিল্পী হিসেবে আভির্ভূত হন। আরেকজন সহশিল্পী শাহিন সামাদ বললেন, বিপুল শুধু তার বন্ধু ছিলো না, ছিলো তার শিক্ষকের মতো। স্বাধীন বাংলা বেতারের অন্যতম শব্দসৈনিক তিমির নন্দী ছিলেন বিপুলের বাল্যবন্ধু। তার মতে, বিপুলের ঈশ্বরপ্রদত্ত কণ্ঠ দিয়ে বাঙালির শেখরের গানগুলোকে জনপ্রিয় করেছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সাথে ওপপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন এই মহান শিল্পী, যিনি শেষ জীবনে গান না গাইতে পেরে আফসোস করে গেছেন। যতটুকু গেয়েছেন, তারই বা কতটুকু প্রতিদান তিনি পেয়েছিলেন, তিনিই তা বলতে পারবেন। ছাত্রজীবনে আমার তরুন হৃদয় দগ্ধ হয়েছিলো এই মরমী শিল্পীর দরদি গানে। দেশের প্রতি কতটুকু মায়া আর ভালোবাসা থাকলে এমন প্রাণ-জুড়ানো গান গাওয়া যায়! মুক্তির গানেই আসল বিপুলকে আমি দেখেছিলাম। কেউ যদি ‘মুক্তির গান’ না দেখে থাকেন, তবে বিপুলকে চেনা যাবে না, তার মূল্যও বুঝা যাবে না। আজ তার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত এবং বেদনাহত। গভীর শ্রদ্ধা জানাই মহান শিল্পীকে!
———————————————-
*আজকের জাতীয় দৈনিকে বিপুল ভট্টাচার্য:
দ্য ডেইলি স্টার
দৈনিক প্রথম আলো
ঢাকা ট্রিবিউন
**মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার লেখাগুলো
১) মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান
২) দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ
৩) কলকাতায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি
৪) চরমপত্রের চরম লেখক
[‘মুক্তির গান’ প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য: বাঁ থেকে চতুর্থজন বিপুল ভট্টাচার্য্য]